চামড়া সংরক্ষণে ঢাকার বাইরে হবে ‘অস্থায়ী শেড’

সংগৃহীত ছবি

চামড়া সংরক্ষণে ঢাকার বাইরে হবে ‘অস্থায়ী শেড’

অনলাইন ডেস্ক

ঈদের সময় চামড়ার দর পতন ও পাচার রোধে ঢাকার বাইরে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে অস্থায়ীভাবে ‘শেড’ নির্মাণ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেবে শিল্প মন্ত্রণালয়।

রোববার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স’ এর সপ্তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ কাজ তদারকি করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন- বিসিক। স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ ও পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত স্থানে অস্থায়ী সংরক্ষণাগর নির্মাণ করতে জেলা প্রশাসকদের ডিও (আধা সরকারি পত্র) লেটার দেওয়া হবে।

সভা শেষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সাংবাদিকদের বলেন, “চামড়া শিল্প খাতে সংরক্ষণ সুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে চামড়া নষ্ট না হয়। চামড়া ব্যবসায়ী/পাইকাররা যাতে পুঁজির সমস্যায় না পড়েন ও সহজ শর্তে ঋণ পান, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ”

প্রতি বছর শুধু সংরক্ষণের অভাবে কোটি টাকার কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়। এই সুযোগে ঈদের সময়ে ট্যানারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দর কমিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অস্থায়ীভাবে চামড়া সংরক্ষণ হলে ঢাকায় সরবরাহ একসঙ্গে বাড়বে না। ট্যানারি ও আড়ৎদারদেরও অর্থ সংকট হবে না বলে মনে করছে টাস্কফোর্স।

কয়েক বছর কোরবানীর সময়ে কাঁচা চামড়ার দর পতনের পর গত বছর চামড়ার দর নিয়ে অসন্তোষ ছিল না ক্রেতা ও বিক্রেতা পর্যায়ে।

গতবছর কোরবানির ঈদে রাজধানীতে কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত পোস্তায় চামড়ার দর খুচরা পর্যায়ে উঠেছিল প্রতিটি ১০৫০ টাকায়, আগের বছরে সেই আকৃতির চামড়ার দর ছিল ৮০০ টাকা। খুচরা পর্যায় আড়তদারদের হাতবদল হয়ে পোস্তার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্যানারিতে বিক্রি হয় চামড়া।

গত বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীদের জন্য ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার, আগের বছর দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা।

এছাড়া ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারিত ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, আগের বছর যা ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া আগের মত গতবারও প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার।

আগামী কোরবানির ঈদে সারা দেশে বিক্রির জন্য এক কোটি ৩০ লাখ পশু সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক কোটি ২৫ লাখ, যার মধ্যে বিভিন্ন হাটে ১৯ লাখ পশু অবিক্রিত অবস্থায় ফেরত যায়।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, “শিল্প মন্ত্রণালয় চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে যাবে। অর্থাভাব যেন না হয়, এজন্য তাদের সহযোগিতা দরকার, আমরা তা করে যাবে। “

কোরবানির ঈদে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আগের অবস্থা আর নেই। এক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে জানিয়ে নুরুল মজিদ বলেন, “চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিসিক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নীতিগত সহযোগিতাসহ এসব করণীয় বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে। ”

সভার সূচিতে কোরবানির চামড়ার মূল্য নির্ধারণ এবং চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞাপন, স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ এবং পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত স্থানে অস্থায়ী সংরক্ষণাগার নির্মাণ, কোরবানির পশুর চামড়ার পাচার রোধ ও চামড়া সংগ্রহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মত বিষয়গুলো ছিল।

চামড়া নিয়ে সোশাল মিডিয়াসহ গণমাধ্যমে যেন কোনো গুজব না ছড়ায়, বিদেশ থেকে অবৈধপথে পশু যাতে দেশে না আসে, সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয় সভায়।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছি। সিইটিপি পুরোপুরো ঠিক হলে আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চামড়া রপ্তানিতে দর পাওয়া যবে। অনেক প্রতিষ্ঠানই ইতোমধ্যে অন্যান্য সব কমপ্লায়েন্স অর্জন করতে পেরেছে। ”

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে এতিমখানাগুলোতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করবে বিসিক। অতীতের মত এবারও কোরবানি ঈদের পরের সাত দিন রাজধানীর বাইরের চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করবে না।

হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের অব্যবহৃত জায়গায় ভবন নির্মাণ করতে দ্রুত নকশা অনুমোদন দিতে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানাসহ টাস্কফোর্সের সদস্যরা সভায় অংশ নেন।

news24bd.tv/DHL