গাড়ির মেকানিক থেকে কুখ্যাত মানব পাচারকারী হয়ে ওঠার গল্প

বারজান মাজিদ

গাড়ির মেকানিক থেকে কুখ্যাত মানব পাচারকারী হয়ে ওঠার গল্প

অনলাইন ডেস্ক

ইরাকি নাগরিক বারজান মাজিদ ওরফে স্করপিয়ন ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের নটিংহামে গাড়ি মেরামতের কাজ করতেন। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের নটিংহামে গাড়ি মেরামতের কাজে নিয়োজিত থাকা এই ইরাকি ভয়াবহ মানব পাচারের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।

স্করপিয়ন বা মাজিদ, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বছরের পর বছর ধরে তিনি দলবল নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে মানব পাচার করে গেছেন। ২০১৮ সাল থেকে গত মাস পর্যন্ত এই চ্যানেল নৌকায় করে পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন ৭০ জনের বেশি।

এর মধ্যে ফ্রান্সের উপকূলে সাত বছর বয়সী একটি শিশুসহ মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।

নৌকায় করে এই যাত্রা বেশ বিপজ্জনক হলেও অর্থ কামানোর জন্য পাচারকারীদের কাছে কাজটি কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়। ইংলিশ চ্যানেল পার করাতে জনপ্রতি ছয় হাজার পাউন্ড বা প্রায় ৯ লাখ টাকা নিয়ে থাকেন তারা। ২০২৩ সালে প্রায় ৩০ হাজার অভিবাসী এই চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

এ থেকে পরিষ্কার যে পাচারকারীদের লাভের অঙ্কটা কত বড়।

স্করপিয়নের খোঁজ পাওয়া গেছিলো উত্তর ফ্রান্সের একটি অভিবাসী শিবিরে। একটি ডিঙিনৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ যেতে বসেছিল এক শিশুর। নৌকাটি সাগরে চলাচলের জন্য মোটেও উপযুক্ত ছিল না। এমনকি সেটির ১৯ আরোহীর জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থাও ছিল না।

যুক্তরাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তারা যখন অবৈধ অভিবাসীদের আটক করেন, তখন তাদের মুঠোফোনগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখেন। ২০১৬ সালের পর থেকে সন্দেহজনক একটি নম্বরই বারবার সামনে আসছিল। ওই মুঠোফোনগুলোয় নম্বরটি স্করপিয়ন নামে রাখা ছিল। কখনো কখনো একটি কাঁকড়াবিছার ছবি দিয়েও নম্বরটি সেভ করা হয়েছিল।

এই স্করপিয়ন কে, তা খোলাসা করেছিলেন মার্টিন ক্লার্ক নামের যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) একজন জ্যেষ্ঠ তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি বলেছিলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে বোঝা যায়, স্করপিয়ন আসলে বারজান মাজিদ নামের এক কুর্দি ইরাকি।

তবে মাজিদ কিন্তু নিজেই পাচারের শিকার হয়েছিলেন ২০০৬ সালের ঘটনা। ২০ বছর বয়সী মাজিদকে একটি লরিতে করে তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। তবে এক বছর পর তাকে দেশটি ছেড়ে যেতে বলা হয়। যদিও আরও কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে থেকে গিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে কিছু সময় নানা অপরাধে কারাগারে থাকতে হয়েছিল তাকে।

যদিও শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে মাজিদকে ইরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর কিছু সময় পর মানব পাচারের জগতে পা রাখেন তিনি। স্করপিয়ন নামে তার পরিচিত বাড়তে থাকে। ধারণা করা হয়, বড় ভাইয়ের হাত ধরেই এই অপরাধে জড়িয়েছিলেন তিনি। তার বড় ভাই তখন বেলজিয়ামের কারাগারে সাজা খাটছিলেন।

২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে মানব পাচার–বাণিজ্যের একটি বড় অংশ মাজিদ ও তার দল নিয়ন্ত্রণ করত বলে মনে করা হয়। এরপর দুই বছর ধরে মানব পাচার রোধে অভিযান চালায় আন্তর্জাতিক পুলিশ। অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া মাজিদের দলের ২৬ সদস্যকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে তখন মাজিদ ছিলেন পলাতক।

এদিকে মাজিদের অনুপস্থিতিতেই বেলজিয়ামের একটি আদালতে তার বিরুদ্ধে বিচারকাজ চালায়। মানব পাচারের ১২১টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি তাকে ১২ কোটি টাকার বেশির জরিমানা করা হয়। এরপর থেকেই মাজিদের আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে তার সন্ধান করার চেষ্টা করা হলেও তা অনেকটাই ব্যর্থ হয়।

news24bd.tv/SC