উপজেলা পরিষদে ভোটের হার সর্বনিম্ন, দায় কার?

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

উপজেলা পরিষদে ভোটের হার সর্বনিম্ন, দায় কার?

অনলাইন ডেস্ক

ষষ্ঠবারের মতো দেশে এবার অনুষ্ঠিত হলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। গত বুধবার (৮ মে) ভোট হলো প্রথম ধাপে। এর আগে যত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এর মধ্যে এবারই সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচনি এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে।

উপজেলা পরিষদে ভোটের উপস্থিতি কেন এত কমে গেল, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে জনমনে।  

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসাব বলছে, বুধবার অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ আর ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে ভোটের এই হার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ।

আর বিএনপি বলছে, মানুষ ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।  

২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। আর ২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। এবার প্রথম ধাপে ভোটের হার ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে।  

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থার প্রতিফলন এই ভোটের ফলাফল। আর এই অনাস্থার কারণে মানুষ এখন ভোটবিমুখ।

প্রথম ধাপের এই  ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতে ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে যাঁরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১০ জন মোট ভোটারের ১০ শতাংশের কম ভোট পেয়েছেন। অবশ্য প্রদত্ত ভোটের হিসাবে তাঁদের ভোট পাওয়ার হার আরও বেশি। এর বাইরে দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের। এই পরিস্থিতির দায় কার, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

জানা গেছে, মাত্র ১৩টি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বেশি। এই উপজেলাগুলোতে ব্যবধান ১ হাজার ভোটের কম। ৩১টি উপজেলায় ভোটের ব্যবধান হয়েছে ৩ হাজারের কম। সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধান হয়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে মোট ভোটার ছিলেন ৬ লাখ ১১ হাজার ৬১০ জন। ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা শাহিন আহমেদ পেয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলতাব হোসেন পেয়েছেন ৬০ হাজার ২৯৩ ভোট। ভোটের ব্যবধান হয়েছে ১ লাখের বেশি।


বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনে ভোটারের অনীহার বিষয়টি  অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও স্বীকার করেছেন। এর জন্য দায় কার, এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে না এবং উপজেলা নির্বাচনও হয়নি—সেটিই ভোটারদের নির্বাচনবিমুখ করার অন্যতম একটি কারণ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলই তা মনে করছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, ভোটে মানুষের আগ্রহ কমেছে। কারণ, রাজনৈতিকভাবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এ জন্য বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন বর্জন করে আসছে। সেটি ভোট নিয়ে আগ্রহ কমাচ্ছে।

তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকেই ভেঙে দিয়েছে। ভোট থেকে ভোটারদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটাই প্রধান কারণ। তিনি আরও বলেন, এখানে বিরোধী দলের কোনো ব্যর্থতা নেই। এককভাবে ক্ষমতাসীনদেরই এর দায় নেওয়া উচিত।

news24bd.tv/আইএএম