দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত?

সংগৃহীত ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত?

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছেন চাকরি-প্রত্যাশীরা। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী এ বয়স সীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়ার পর এটি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর থেকে ৪৭ বছরের বেশি রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে বয়স ত্রিশের কোঠা পেরুলে আর সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা যায় না।

অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজাতি কোটা থেকে যারা সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেন তাদের জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৩২ বছর।

বিসিএসে আবেদনের বয়স সীমা ৩০ বছর হলেও সরকারি নার্সিংয়ে চাকরির ক্ষেত্রে তা ৩৫ বছর এবং বিভাগীয় প্রার্থীর কোটায় ৩৫ বছর। এছাড়াও বেসরকারি স্কুল-কলেজেও ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যায়।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যখন ৩৫ বছর করার যে দাবি উঠেছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত?

চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানদণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্বের ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর।

কোনও কোনও দেশে আবার এটি উন্মুক্ত।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির বয়সসীমা:

বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে সাধারণ কোটায় আবেদন করা যায়। তবে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অন্যান্য কোটার ক্ষেত্রে এ বয়স সীমা ৩২ বছর।

ভারতে যে বয়সসীমা: 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যভেদে ও চাকরির ধরন অনুযায়ী আবেদনের বয়সসীমা ৩২-৪২ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে।

সরকারি চাকরির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন। কমিশনের ওয়েবসাইটে ইনডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে (আইএএস) আবেদন করার বয়স উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

ভারতে প্রশাসনিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়সের মধ্যে আবেদন করা যাবে। তবে, বিভিন্ন ধরনের কোটায় আবেদন করার বয়সের পার্থক্য রয়েছে।

নেপালের সরকারি চাকরির বয়সসীমা: 

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এই কমিশনের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পদে আবেদনের জন্য বয়সের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সিভিল সার্ভিস ও লেজিসলেটিভ পার্লামেন্ট সার্ভিসে আবেদনের ক্ষেত্রে গেজেটেড ও নন-গেজেটেড পদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

গেজেটেড ও নন গেজেটেড পদ যেমন: ক্রয়কারী, নায়েব সুব্বাসহ এ ধরনের পদে আবেদন করার ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর। এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। তবে, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।

এছাড়া গেজেটেড পদ যেমন: শাখা কর্মকর্তা, উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব বা এ ধরনের পদে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এ ধরনের পদে মহিলা ও প্রতিবন্ধীরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।

তবে, শূন্য পদের ক্ষেত্রে উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করার বিধান রেখেছে নেপালের পাবলিক সার্ভিস কমিশন।

স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাথমিক স্তর বিশেষ করে সহকারী স্তরের পদে সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। অফিসার পদগুলিতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন।

শ্রীলঙ্কায় যে বয়সসীমা:

শ্রীলঙ্কার সরকারি ওয়েবসাইট ‘প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েট’ এ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই দেশটি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছে। স্নাতক পাশ করা চাকরি-প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

সরকারি এই ওয়েবসাইটে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্নাতক পাশ করা বেকার ব্যক্তিরা সরকারের যে কোনো কর্মসূচির অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। আগে এই বয়সসীমা ছিল ৩৫ বছর।

তবে, সরকারি চাকরির সব ক্যাটাগরির জন্য এই বয়সসীমা প্রযোজ্য নয় বলে জানা যায়।

পাকিস্তানে চাকরির বয়সসীমা:

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেই সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর।

পাকিস্তানের সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে দেশটির ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন। কমিশনের ওয়েবসাইটে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। তবে বিশেষ বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদন করতে পারবে।

তবে সম্প্রতি দেশটির বেলুচিস্তান রাজ্য সরকার এই বয়সসীমা ৪৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখা যায়, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে সরকারি চাকরিতে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায়।

সূত্র: বিবিসি

news24bd.tv/DHL