রূঢ় আচরণ সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

রূঢ় আচরণ সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

 মাইমুনা আক্তার

মুমিনের আচরণে ঔদ্ধত্যতা কাম্য নয়। নম্রতা মুমিনের ভূষণ। নম্রতা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। নবীজি (সা.) তাঁর এই গুণের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। ...’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

এর বিপরীতে ঔদ্ধত্য আচরণ মানুষকে জনবিচ্ছিন্ন করে তোলে। আল্লাহর রহমত থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়।

আচরণের ঔদ্ধত্য কী

ব্যক্তির যে স্বাভাবিক আচরণ তার পরিবর্তন করে রাগের মাধ্যমে চিৎকার-চেঁচামেচি কিংবা প্রত্যাশিত যে আচরণ তা না করে ব্যক্তিকে অপমান বা ছোট করে কথা বললে আচরণে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে রাগ প্রকাশ না করেও পরোক্ষভাবে ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাও উদ্ধত আচরণ। এর কারণ অন্যের কোনো আচরণ ঠিকমতো গ্রহণ করতে না পারা।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উদ্ধত আচরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা কোরো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৮)
উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ দুটি শব্দ বলেছেন, ১. মুখতাল, ২. ফাখুর। তাফসিরবিদদের মতে, ‘মুখতাল’ মানে হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে কোনো বড় কিছু মনে করে। আর ‘ফাখুর’ তাকে বলে, যে নিজের বড়াই করে। (ইবন কাসির)

মানুষ যখন নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শুরু করে, বড় মনে করে, অন্যকে তুচ্ছ করে তখন তার মিথ্যা অহংকার তাকে কলুষিত করে। সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডে তার কুিসত মানসিকতার ছাপ ফুটে ওঠে। এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, নম্রতা যেকোনো বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যেকোনো বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৯৬)

আর এই কারণে একসময় মানুষ তার প্রতি বিরক্ত হতে শুরু করে, তার অনিষ্ট থেকে বাঁচতে তার থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে। একসময় সে দুনিয়া ও আসমানবাসীর কাছে নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়। নবীজি (সা.) এ ধরনের লোকদের নিকৃষ্ট মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) -এর কাছে আসার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তাকে অনুমতি দাও। সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বলেন, সে গোত্রের নিকৃষ্ট সন্তান। লোকটি ভেতরে এলে তিনি তার সাথে নম্রতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তখন আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ লোকের ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। পরে আপনি আবার তার সাথে নম্রতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তখন তিনি বলেন, হে আয়েশা! নিশ্চয়ই সবচেয়ে খারাপ লোক সে-ই যার অশালীনতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ তার সংসর্গ পরিত্যাগ করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৪)

অনেকে ঔদ্ধত্য আচরণ করে অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য। অথচ হাদিস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে সেই প্রভাব মানুষের জন্য কল্যাণ নয়, বরং অকল্যাণই বয়ে আনে।

তাই মুমিনের উচিত, সর্বদা নবীজি (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণ করা। নম্রতা প্রদর্শন করা। নিজেকে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়, যা দুনিয়া ও আখিরাত সব ধ্বংস করে দেবে। আল্লাহর দরবারে অপ্রিয় করে তুলবে। মহান আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।
 

এই রকম আরও টপিক