রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হলে হার্টের সমস্যা, স্ট্রোকসহ অন্যান্য জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিয়মিত চেকআপ করলে এসব বিপদ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ বিষয়ে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস এম ইয়ার ই মাহাবুব
কোলেস্টেরল হলো রক্তে মিশে থাকা চর্বি বা লিপিড যার সাহায্যে শরীর জীবকোষের কোষপ্রাচীর তৈরি করে। তাছাড়া শরীরের বিপাক, প্রাণশক্তি ও হরমোন তৈরিসহ অনেক কাজে এই কোলেস্টেরল ব্যবহৃত হয়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু করণীয় হলো :
ডায়েটের ভূমিকা
কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
• এমন পুষ্টিকর খাবার খান যাতে পশুর চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে কিন্তু আঁশ বা ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।
• প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন গোটা শস্য, প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি।
• ফলমূলে ক্যালরি কম এবং পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। এজন্য ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলা, পেয়ারা, তরমুজ, কিউই, আপেল, কলা, পেঁপে ইত্যাদি খান।
• পালং, মেথি, কলমি, পুঁই, কচু ইত্যাদি যে কোনও ধরনের শাক খান।
• পরিমাণমতো খান গম, চাল, ভুট্টা ইত্যাদি।
• সপ্তাহে তিনদিন পুরো একটা করে ডিম খেতে পারেন। বাকি চারদিন শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশ খান।
জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন
•উচ্চতর অনুপাতে একটি মাঝারি ওজন বজায় রাখতে নিয়মিত দ্রুত পায়ে হাঁটা, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, জগিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করুন।
• প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমান।
যা করবেন না
• রেড মিট বিশেষ করে গরুর মাংস, খাসির মাংস, চিংড়ির মগজ, তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার কম খান।
• প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।
• প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেক, কুকিজ, পেস্ট্রি, পনির, ঘি, মাখন, চিজ, জ্যাম-জেলি বাদ দিন।
• ক্রিমযুক্ত দুধ এবং তা থেকে তৈরি খাবার, ঘি-মাখন যতটা সম্ভব কম খান।
• বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকবেন না।
• খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় যাবেন না।
• টেনশন বা মানসিক চাপমুক্ত জীবন গড়ে তুলুন।
• ধূমপান, মদ্যপান একদম নয়।
স্ক্রিনিং করান
আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা আদৌ বেশি কি না, তা জানতে ১২-১৪ ঘণ্টা খালি অভুক্ত থেকে খালি পেটে রক্তের লিপিড প্রোফাইল (fasting lipid profile) পরীক্ষাটি করুন। আমেরিকার ন্যাশনাল হার্ট, লাংস অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট (এনএইচএলবিআই) অনুসারে, একজন ব্যক্তির ৯ বছর থেকে ১১ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম কোলেস্টেরল স্ক্রিনিং হওয়া উচিত। এরপর প্রতি পাঁচ বছরে পুনরাবৃত্তি করলেই হয়।
তবে ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারীদের প্রতি দুই বছরে একবার তাদের কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। হার্টের সমস্যা থাকলে যে কোন সময় এবং ৬৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের প্রতি বছর একবার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। এসব পরীক্ষায় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি পাওয়া গেলে তখন সতর্ক হতে হবে।