পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মজহারুল হকের পদত্যাগে আল্টিমেটাম

পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মজহারুল হকের পদত্যাগে আল্টিমেটাম

অনলাইন ডেস্ক

পঞ্চগড় জেলা স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কয়েকটি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। এ সময় তারা পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি ও মকবুলার রহমান হাসপাতালে ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মজহারুল হক প্রধান। ছাত্ররা তাকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

 

শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জানতে পেরে ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন তারা। এ সময় সাবেক ওই সংসদ সদস্য মিটিং করছিলেন। শিক্ষার্থীরা এ সময় তাকে বলেন, আপনি যে কমিটির সভাপতি সেই কমিটির বৈধতা নেই। সমাজসেবা অধিদপ্তর এই কমিটিকে অনুমোদন দেয়নি।

বৈধ কাগজপত্র থাকলে আপনি দেখান।  

এ সময় সংসদ সদস্য বলেন, এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন। আগামীকাল আপনারা আসেন। সকল কাগজপত্র দেখানো হবে। শিক্ষার্থীরা এ সময় বলেন, আপনি আমাদের অভিভাবকের মতো। এই হাসপাতালে অনেক দুর্নীতি হয়। এ বিষয়ে পত্রিকা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এ সময় তারা এমপিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরে সাবেক ওই সংসদ সদস্য সবার কাছে সময় চেয়ে কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।  

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মখলেছার রহমান, সহসমন্বয়ক মুরাদ হাসান ও ইতি আক্তারের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক একেএম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের উপস্থিত  শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমি ২০ বছর আগে আজীবন সদস্য হয়েছি। কোনোদিন একটি মিটিংয়ে আমাকে ডাকা হয়নি। সাধারণ সদস্যরা এই হাসপাতাল নিয়ে কিছুই জানে না। একটি সিন্ডিকেট এই হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করে লুটপাট করছে।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ১৯৯৩ সালে পঞ্চগড় শহরের অদূরে মিঠাপুকুর এলাকায় ১ একর ৬২ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি। সেই সময় জেলার কয়েক হাজার আখচাষি এবং ব্যবসায়ীসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। পরে সরকারি অনুদানে নির্মিত ৪ তলা ভবন ২০১৩ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য সরকারি উদ্যোগে অফিস এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার কক্ষ, নার্সদের কক্ষসহ রোগীদের জন্য উন্নত মানের বিছানা প্রদান করা হয়।  

২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ৩৫ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি দ্বারা এই হাসপাতাল পরিচালিত হলেও ২০২০ সালে জেলা প্রশাসককে বাদ দিয়ে কমিটির সভাপতি হন পঞ্চগড়- ১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান। তবে এই কমিটি অনুমোদন দেয়নি সমাজসেবা অধিদপ্ত। ২০১৮-১৯ সালে সরকারি অনুদানে ৭ কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ব্যবহারের অভাবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে।

হাসপাতালের কেনা কাটা ও হিসাব নিকাশেও অসচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রসহ অন্যান্য লাভজনক খাত থেকে লাভ্যাংশ ডায়াবেটিক সমিতির হিসাবে জমা হয় না। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রটি ডায়াবেটিক সমিতি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করছেন করছেন কয়েকজন কর্মচারী। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরাও নিয়ম বহির্ভূতভাবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট অন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসতে চাইলেও অসাধু কর্মচারীদের উৎসাহে অন্য ক্লিনিক বা ডায়াগষ্টিকে চলে যাচ্ছেন তারা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ৮ মাসের বেতনও পাচ্ছেন না কর্মচারী কর্মকর্তারা। পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে। পরে তারা প্রাণিসম্পদ বিভাগে কর্মচারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে।
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক