লটকনে লাখপতি ইমান আলী  

লটকনে লাখপতি ইমান আলী  

নরসিংদী প্রতিনিধি

বাপ-দাদার সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগেই লটকনের চাষ করে লাখপতি ইমান আলী। নরসিংদি জেলায় জন্ম ইমান আলীর। সন্তানের মতো দেখভাল করেছেন তার বাগানের শত শত গাছের। গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী যত্ন আত্তিতে রাখেননি কোনো কমতি।

ইমান আলীর বাগানে গাছে ঝুলে থাকা লটকন লাখ টাকার সম্পদ। হাতের মুঠে চলে আসা ছোট এই ফল থেকে বছরে ২০ লাখ টাকা আয় হয় কৃষক ইমান আলীর।

তিনি বলেন, লটকন ফসলটা হল অত্যন্ত লাভবানজনক। তিন উপজেলার মানুষ এত সুখি ইউরোপের মানুষেরাও এত সুখি না কী বলব এটা।

গাছের ডালাপালা বোঝাই এসব লটকনের পেছনে বছরে খরচ পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ থেকে এক মৌসুমে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা ঘরে তুলতে চান ইমান আলী।  

তিনি আরও বলেন, আমার মনে করেন ৩ লাখ টাকার মতো খরচ আছে। বিক্রি আল্লাহ দিলে যদি আল্লাহ ফল দেয়। ২০ থেকে ২২ লাখ বিক্রি হয় আল্লাহ দেয়। এটা আল্লাহর দান। আল্লাহর প্রদত্ত আল্লাহর দেওয়া।

ইমান আলী আরও বলেন, '৫০০ শতাংশের মতো জমি আল্লাহ দিলে আছে। বাপ দাদারা দিয়ে গেছে। যেমন আপনার একটা ছেলেকে আপনি ডানো খাওয়ান। আমিও গাছকে ডানো খাওয়াতে চেষ্টা করি। ডানো খাওয়ালে যদি আমার ছেলে সুস্থ থাকে। যেমন গোবর সার দিলাম খৈল দিলাম'।

গাছে গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা পাকা লটকন। গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত এমনভাবে ফলের আধিপত্য যে ডাল নজরে পড়া মুশকিল। যেন ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে বিশালদেহী লটকন গাছ। লটকনের এই আয়োজন স্বচক্ষে দেখতে বাগানে ছুটে আসে অনেকে।

লটকন বাগান দেখতে আসা লোকজন বলেন, আমরা ঢাকা থেকে তিন বন্ধু মিলে লটকন বাগান পরিদর্শনে সকালে রওনা হই। এবং পরিদর্শন করে লটকন খাই। লটকন সুস্বাদু ও সুমধুর ছিল।

আরও একজন বলেন, এখানের লটকনগুলা দেখতে সুন্দর খাইতেও মিষ্টি একটু টকের মিশ্রণও আছে। খেতে খুব ভালো লাগে।

এখনকার জনপ্রিয় এ লটকনে একসময় পাওয়া যেত কেবল বনে-জঙ্গলে। কদর বাড়ায় এখন নরসিংদীর বেলাব ও শিবপুর উপজেলার প্রতি বাড়িতেই চাষ হচ্ছে লটকন।

ইমান আলী বলেন, বাড়ি বাড়ি লটকনের চাষ আছে। আগে কাঁঠাল আছঠাল। এখন কাঁঠাল গাছ কেটে কেটে মানুষ লটকন লাগায়। লটকনে লাভ বেশি।

সাধ্যের মধ্যে দাম ও ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় বেড়েছে লটকনের চাহিদা। হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে টক মিষ্টি স্বাদের লটকন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইমান আলীর মতো আরো কৃষকদের লটকন যাচ্ছে বিদেশে।

ইমান আলী বলেন, যেমন ধরেন- কানাডা, লন্ডন, ইতালি একটু বেশি প্রচলিত যেমন পর্তুগাল লন্ডন থেকে মাল নিয়ে বেচে। আর মিডল ইস্টে করোনার পরে বিমান নাই মাল দিতে পারি না। এখন কুয়েত দুবাইয়ে কিছু কিছু মাল যায়।

গাছ ভর্তি লটকনের দামও ভালো পান কৃষকরা। গাছ প্রতি দাম পাওয়া যায় ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাইকাররা বাগানে এসে দরদাম করে কিনে নেন এই মৌসুমি ফল। ইমান বলেন, লটকনের মতো লাভজনত কোনো ফসল নাই। আমার এলাকায় এমনও গাছ আছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ২ বছর আগে আমার ওই এক গাছে আল্লাহর রহমতে ৯০ হাজার টাকা দিছিলো।

তিনি আরও বলেন, ১০০ টাকা আছে ১৫০ টাকা আছে। আবার ৬০ টাকাও আছে ৭০ টাকাও আছে। যেটা যেমন বড় তেমন দাম। ভালো টা ভালো দাম। আর যেটা নিরস ওটা কম দাম।

এক মৌসুমে লটকন বিক্রির টাকায় সারা বছর সংসার চালান এখানকার বাসিন্দারা। লটকনের মিষ্টি স্বাদ ভাগ্য বদলেছে এখানকার মানুষের।

ইমান আলি আরও বলেন, আমার এখানে কাজ করে ৩ থেকে ৪ জন লোক চলতে পারে। আমাদের এখানে মাল কিনলে একজন ব্যাপারীর পেছনে ৮ থেকে ১০ জন লোক কাজ করে। সবাই লটকন নিয়া ব্যস্ত। যার বেতন ছিলো ১০ হাজার তা এখন ২৫ হাজার।

news24bd.tv/TR

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর