ব্রহ্মপুত্র ও দশানীর ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

ব্রহ্মপুত্র ও দশানীর ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও প্রতিষ্ঠান

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর

শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে শতশত পরিবার।  

এলাকাবাসীর দাবি, ভাঙনরোধে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনরোধে দ্রুতই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে। আর স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ ও ৭নং চর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদীর পাড়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের হাজার হাজার বাসিন্দা।

ঘর ও ফসলি জমি ভাঙনের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। গত দুই বছরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও দশানীর ভাঙনে ৬নং চর গ্রামের অনেক পরিবারের বসতভিটা, কবরস্থানসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেকের জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বার বার ঘরবাড়ি স্থানান্তর করে যেন ক্লান্ত তারা। চলতি বছরও বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে গত কয়েকদিনে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে আবাদী জমি, বসতঘর, গোরস্থান, মসজিদ। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, মাদ্রাসা ও বহু ঘরবাড়ি। এতে আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন স্থানীয়রা।  

অনেকেই শঙ্কায় রয়েছেন, যেকোনো মুহূর্তে তাদের বাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের। তাই দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।

সরেজমিনে গেলে ভাঙনকবলিত এলাকার অধিবাসী মো. সুরুজ মন্ডল বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ ভাঙতে ভাঙতে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। দুইবার বাড়ি ভাঙছে। এখন আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমাদের। খুব কষ্টে আছি আমরা। আমাদের কেউ দেখে না। এখন ভাইসা যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। নদীতে শক্ত একটা বাঁধ দিলে এলাকাটা বেঁচে যাইতো। নদীপাড়ের 

বৃদ্ধ মো. আয়নাল হক বলেন, আমার পূর্বপুরুষদের কবর এখানে। মনে করছিলাম আমার কবরটাও একসাথে হব। কিন্তু ভাঙনে তো আর গোরস্থানটা থাকতাছে না। অর্ধেক তো নদী নিয়াই গেছে। আর অর্ধেক ভাঙতে কতহন। যারা মারা গেলো তাদের শেষ চিহ্নও থাকতাছে না।

মো. মনাহার বলেন, ভাঙনের কারণে ওপাড় থেকে বাড়ি ভেঙে এপারে নিয়া আইছি। এখন এপাড়েও ভাঙন শুরু হইছে। এখন আমরা কই যামু। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, এখানে বেড়িবাঁধ বানায়া দিক।

মর্জিনা বেগম বলেন, নদীতে আমার বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন পাড়ে একটা ছাপড়া ঘর তুলে কোনোমতে পোলাপান নিয়ে থাকতেছি। রাতে ঘুমাইতে পারি না, কখন নদীতে ছাপড়াটাও ভেঙে নিয়ে যায়। তাই সারারাত জেগে থাকি।

আব্বাস আলী বলেন, আমার কয়েক কাঠা জমিতে বাগান ছিল। সেই বাগান ভেঙে নদীতে চলে গেছে। এখন বাড়িটাও নদীর পেটে চলে যাইতেছে। আমরা খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। এইখানে একটা বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে করে দেওয়া দরকার।

এদিকে ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুঁইয়াসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, ভাঙনরোধে জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে। আর স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এদিকে ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধ করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই নদীভাঙন চলছে। এ কারণে এ এলাকার মানুষ খুবই কষ্টে আছে। আমি এখানে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সাথে কথা বলব। আশা করি শিগগিরই কাজ শুরু হবে।  

তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় মানুষের পাশে রয়েছেন। কোনো মানুষ যাতে নদীভাঙনে নিঃস্ব না হয় সেজন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আপনাদের চিন্তা করার কোনো কারণ নাই। এর একটা ব্যবস্থা আমাদের সরকার করবে ইনশাআল্লাহ।

 

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক