খালেদার মুক্তিসহ চার ইস্যুতে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত বিএনপির

সংগৃহীত ছবি

খালেদার মুক্তিসহ চার ইস্যুতে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত বিএনপির

অনলাইন ডেস্ক

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই ভিন্ন কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপিও আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভারতের সঙ্গে ‘অসম’ সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে এ আন্দোলন হবে। এজন্য একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এর মধ্যে কয়েকটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে হবে।

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মহানগর ও জেলা সদরে তিন দিনের সমাবেশ-কর্মসূচি শেষে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, বৈঠকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে গণঅনশন, স্বেচ্ছা কারাবরণসহ কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। আর প্রাথমিকভাবে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। আজ (বুধবার) দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে যুগপতের মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে বিএনপি।

তাদের মতামত নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে।

গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করায় স্থায়ী কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ ইস্যুতে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শিগগির খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রায় এক বছর যুগপৎ আন্দোলন করে বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় সব মিলিয়ে ৪০টির মতো রাজনৈতিক দল যুক্ত ছিল। বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর আন্দোলন এবং বর্জনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের পর ১২ ও ১৩ জানুয়ারি মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরপর আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল ও যুগপতের কর্মসূচি নির্ধারণে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিত্রদের সঙ্গে ফের বৈঠক করে বিভিন্ন প্রস্তাবনা নেয় দলটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুগপৎভাবে কোনো কর্মসূচি হয়নি। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অবশ্য যুগপৎ আন্দোলন শুরু না হলেও নির্বাচনের পর থেকেই নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে যুগপতের মিত্র দল ও জোটগুলো।

এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মুক্তির দাবি সামনে নিয়ে আসে বিএনপি। এই ইস্যুতে গত ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা শহরে তিন দিনের সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে দলটি। এমন অবস্থার মধ্যেই সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এবং সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছে। বিএনপি এরই মধ্যে উভয় আন্দোলনকে ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত’ আখ্যা দিয়ে তাতে সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ অনেকের দুর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে সরকার। যেগুলোকে ‘অসম’ উল্লেখ করে তাতে দেশের কোনো লাভ হবে না বলে দাবি করেছে বিএনপি।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি বিক্ষিপ্তভাবে থেমে থেমে কিছু কর্মসূচি করলেও দেশের বিদ্যমান সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন করে আন্দোলনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সেই আন্দোলনে যুগপতের শরিকদেরও পাশে চায় বিএনপি। তাই আগামীতে যুগপৎভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন করে মিত্রদের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল চার দলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম (মন্টু) ও এনডিএমের সঙ্গে বৈঠক হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে যুগপতের অন্য শরিকদেরও মতামত নেবে বিএনপি। তবে এর আগের দুটি বৈঠকে বিএনপির কাছে ‘সম্ভাবনাময়’ বিগত আন্দোলন সফল না হওয়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান এবং আগামী দিনের লক্ষ্য নির্ধারণ নিয়ে জানতে চেয়েছিল যুগপতের গুরুত্বপূর্ণ জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। সেগুলোর এখনো সদুত্তর পাননি তারা। তাই আগামীর বৈঠকে কর্মসূচি ছাড়াও এগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এদিকে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে আন্দোলন ইস্যুতে আজ দলের যুগ্ম মহাসচিবদের মতামত নেবে বিএনপি। এর আগে গত ১৫ জুন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে ৪৫ নেতাকে পদায়নের পর যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে আন্দোলন সংক্রান্ত বেশকিছু কর্মসূচির প্রস্তাব করেন নেতারা।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক আছে। আন্দোলন-কর্মসূচির বিষয়ে মতামত নিতেই বৈঠক ডাকা হয়েছে।

বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থায়ী কমিটির সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন দুর্নীতি, দেশের ও বাইরের ব্যাংকগুলো থেকে ঢালাও ঋণ গ্রহণের ফলে ঋণফাঁদ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনগণের ওপর চাপ বাড়ছে। এ বিষয়গুলোকে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যোগ্যদের সমন্বয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরে নতুন কমিটি ঘোষণা করায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে এসব আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদও দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগামীতে আরও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে কমিটি দেওয়ার পরামর্শও দেন নেতারা।

news24bd.tv/DHL