বাংলাদেশের চেতনাকে মুছে ফেলতেই বারবার আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের চেতনাকে মুছে ফেলতেই বারবার আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়

অনলাইন ডেস্ক

মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর দিশাহারা হয়ে পড়ে। এরপর থেকে দলটির নেতা-কর্মীদের দমানোর জন্য চলতে থাকে নির্যাতন।

অসাম্প্রদায়িকতা, জনগণের অধিকার আদায় ও ভাতের অধিকারের দাবি নিয়ে আন্দোলন ও সর্বশেষ দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাকে কখনই ভালো চোখে দেখেনি পাকিস্তান ও তার এদেশের দোসররা। আর বাংলাদেশের এই জনসম্পৃক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের জাতীয়তাবাদকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সঙ্গে হত্যা করা হয়।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। আর এভাবেই গণতন্ত্রের পক্ষে আজীবন লড়াই করা, জেল-জুলুমের শিকার হওয়া গণতন্ত্রকামী নেতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বৈরশাসন।

পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ক্ষমতার মধ্যকেন্দ্র ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ও হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। তাদের আমলে নির্যাতনের শিকার হতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।

জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করে আবদুল মালেক উকিল, সাজেদা চৌধুরীসহ অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার শাসনামলে প্রায় ১২০০ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে বিনা বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয়। পচাত্তরের পর অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হন। এরপর ক্ষমতা গ্রহণ করে আরেক সেনা কর্মকর্তা এরশাদ। তিনিও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধা ও এর স্বপক্ষে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে।

এই সময়গুলোতে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দী করা হয়। মিথ্যা মামলা আর হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় অনেককে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধংস করতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছিল জোরালোভাবে। ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্যাতন, অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে দল ভাঙা, নেতাকর্মীদের ক্ষমতাসীন দলে ভেড়ানোর চেষ্টা এবং কখনও কখনও দলীয় কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় রাখার ষড়যন্ত্র করতে থাকে স্বৈরশাসকরা।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকার সময় বিএনপি একই কায়দায় আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার পায়তারা শুরু করে।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জয় লাভের ঠিক পর পরই তারা সারাদেশে শুরু করেছিল হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য হামলা। ওই সময় ২৫,০০০ এর বেশি আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল বিএনপি-জামাত জোট। পঙ্গু করেছিল হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছিল শত শত মহিলা, এমনকি শিশুরাও। বিএনপির ওই শাসনামলেই আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আহসানউল্লাহ মাস্টারকে সন্ত্রাসীরা ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে তাঁর তিনসহযোগীসহ হবিগঞ্জে বোমা মেরে হত্যা করা হয়। সেইসঙ্গে ঘটে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা।

নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধানে একটি বড় সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের পছন্দের প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে রেখে নির্বাচনের সময় সুবিধা আদায়ের জন্য এই কাজ করেছিল বিএনপি সরকার। এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টার কারণে ২০০৬ সালের পর বাংলাদেশে দুই বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেনা সমর্থক তত্ত্বাবধায়ক নামের ওই সরকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের জেলে পাঠায়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মিথ্যা মামলা দিতে থাকে। তবে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ঐতিহ্য ও নেতা-কর্মীদের দৃঢ়তার কাছে টিকতে পারেনি দেশবিরোধী এই অপশক্তিগুলো। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণেই ২০০৮ সালে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। যেখানে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে দলটি।  

news24bd.tv/ab