বজ্রপাতে ঝরল ১১ প্রাণ

বজ্রপাতে ঝরল ১১ প্রাণ

অনলাইন ডেস্ক

নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামে বজ্রপাতে নারী-শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৭ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনজন, নওগাঁয় তিনজন ও নাটোরে দুইজন এবং ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামে একজন করে মারা গেছেন।

নিউজ টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নওগাঁ: নওগাঁর মান্দা ও পত্নীতলা উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।  

নিহতরা হলেন, মান্দা উপজেলার ভোলাম গ্রামের ফইমুদ্দিনের ছেলে শামসুল আলম (৩৪), পত্নীতলা উপজেলার উপজেলার পাটিচড়া ইউনিয়নের নাগরগোলা গ্রামের বিশা মন্ডলের ছেলে খাদেমুল ইসলাম (৫০) ও  গাহন গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী মনিকা (৩৫)।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী জানান, শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করেই পশ্চিম আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়।

কৃষক শামসুল আলম মেঘ দেখে বাড়ির পাশে রনাহার মাঠে জমিতে ছেড়ে দেওয়া বোরো ধানের আঁটি এক জায়গায় জড়ানোর জন্য যান।

স্ত্রী লালবানু বিবিও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে কৃষক খাদেমুল ইসলাম মাঠ থেকে ধান বহন করে বাড়ির উঠানে এসে বজ্রপাতের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়। অপর ঘটনায় একই সময়ে গৃহবধূ মনিকা বাড়ির সামনে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়। তাদের স্বজনরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত্যু ঘোষণা করেন। তিনটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আম কুড়াতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে বজ্রপাতে শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।  

নিহতরা হলেন- জেলার শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আলিডাঙ্গা মহল্লার সুভাষ বোকতের স্ত্রী ববি বোকত (২২), পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া গ্রামের এরশাদ আলী ওরফে রাব্বুলের মেয়ে কবিতা খাতুন (১২) এবং ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাছি হঠাৎপাড়া গ্রামের এসলাম আলীর মেয়ে আমেনা খাতুন (১০)।

আজ শুক্রবার দুপুরে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত হলে মারা যান তারা। শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট থানা-পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, বেলা ৩টার দিকে ববি তার বাড়ির সামনের একটি বাগানে আম কুড়াতে যান। এ সময় ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়ায় বজ্রপাতে নিহত হন কবিতা খাতুন।

পাঁকা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির সামনে আম কুড়াতে যায় কবিতা। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

অন্যদিকে ভোলাহাট থানার ওসি সুমন কুমার জানান, বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বাগানে আম কুড়াতে যায় আমেনা খাতুন। এ সময় বজ্রপাত হলে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে স্থানীয়রা আমেনাকে নিয়ে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনায় শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা।

নাটোর: জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের কবরস্থান সংলগ্ন বারনই নদীতে দুপুরের দিকে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মো. কামরুল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন মো. মজনু (৪০) নামে একজন। নিহত কামরুল একই উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মো. লুৎফর রহমানের ছেলে। আর আহত মজনু একই গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান আকরামুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে জেলার গুরুদাসপুরে বজ্রপাতে আবেরা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবেরা গুরুদাসপুর পৌরসভা শহরের আনন্দ নগর মহল্লার সাদ্দাদ হোসেনের স্ত্রী। গুরুদাসপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফজলুর রহমান ফজল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে লিপি আক্তার (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের রনশিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। লিপি রনশিয়া গ্রামের ফিরোজ্জামানের স্ত্রী।

পীরগঞ্জ থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিরাজ বলেন, লিপি আক্তার দুপুরে বাড়ির পাশে ভুট্টার গাছের খড়ি পলিথিন দিয়ে ঢাকতে গিয়েছিলেন যাতে বৃষ্টিতে ভিজে না যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে আহত হন তিনি। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হবে।

দিনাজপুর: জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের লালঘাট এলাকায় বজ্রপাতে জুয়েল (১৯) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

আফতাবগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসাই) সিরাজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত জুয়েল ওই এলাকার গোলজার হোসেনের ছেলে। তিনি আফতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশের একটি কালভার্টের ওপরে বসে ছিলেন জুয়েল। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ফুটবল খেলে বাড়িতে ফেরার পথে বজ্রপাতে জয়নাল আবেদিন নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত জয়নাল আবেদিন উপজেলার গাছুয়া হাদিয়ারগো বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে সকালে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল জয়নাল আবেদিনসহ স্থানীয় কয়েকজন শিশু-কিশোর। খেলা শেষে বাড়িতে ফেরার সময় বেড়িবাঁধের কাছাকাছি এলাকায় বজ্রপাতে জয়নালের মৃত্যু হয়।

news24bd.tv/তৌহিদ