সোনা চোরাচালান বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ দরকার

বাদল চন্দ্র রায়

বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

সোনা চোরাচালান বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ দরকার

বাদল চন্দ্র রায়

আগামী বাজেটে সোনা চোরাচালান বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ চেয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন- বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়। চোরাচালান বন্ধে সারা দেশে একটি চিরুনি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার আনা বন্ধ এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকার আনার সুযোগ কমাতে হবে। এটা করা হলে সোনা চোরাচালানের পাশাপাশি বছরে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার বন্ধ হবে। একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

বাদল চন্দ্র রায় বলেন, ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা উচিত। এ ছাড়া একই ধরনের অলংকার দুটির বেশি আনা যাবে না, এমন বিধি চালু করা হোক। অলংকার এবং সোনার বার আনার নীতিমালা করতে পাশের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাগেজ রুল বিধান সমন্বয় করা হোক। একই সঙ্গে একজন যাত্রীকে বছরে একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা দেওয়া হোক।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার ও অলংকার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট, চোরাচালান ও অর্থ পাচারে কী প্রভাব পড়ছে তা নিরূপণে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি। সোনার গয়না আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ককর ও স্থানীয় বাজারে ভ্যাট কমানো এবং সোনা খাতের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, সোনা খাতকে জুয়েলারি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা গেলে সরকারের হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আয় বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, অসম শুল্ককর কাঠামো, প্রাথমিক কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিতে কালক্ষেপণ ও অতিরিক্ত শুল্কব্যয়, সঠিক নীতিমালার অভাব এ খাতকে দেশি অর্থনীতি থেকে পশ্চাৎপদেই ধাবিত করেছে। বৈধ পথে সোনার বার, কয়েন এবং সোনার অলংকার তৈরি ও রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদান করা হবে বলা হলেও কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির ওপর অসম শুল্কহারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের ওপর রয়েছে ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং উদ্যোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিত উৎসে কর হারের বোঝা। অথচ এ খাতটি রপ্তানি আয় ও রাজস্ব আহরণে হতে পারত সরকারের অন্যতম আস্থার খাত। অপরিকল্পিত আমদানি শুল্ককর হার, শুল্ককর রেয়াত এবং কাঠামোগত শুল্ক ও শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের উদাসীনতা জুয়েলারি শিল্পকে পিছিয়ে দিয়েছে। ফলে ২ লাখ কোটি টাকার স্থানীয় সোনার বাজার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সফলভাবে অবদান রাখতে পারছে না। এ সংকট উত্তরণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে এবং জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান জড়োয়া হাউজ (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বাজুস সোনা, সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। ইএফডি মেশিন যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধনকৃত সব জুয়েলারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে। অপরিশোধিত সোনা আকরিকের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্ত সাপেক্ষে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু জুয়েলারি খাতের জন্য রেয়াতি হারে ১ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্কহার ৫ শতাংশ করতে হবে। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্কহার কমাতে হবে। হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করতে হবে। ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ডের ওপর এইচএস কোড ৭১০৪.২১.১০ অন্তর্ভুক্ত ও শুল্কহার নির্ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করতে আমদানিকৃত মসৃণ হীরা ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ, গোল্ড রিফাইনারি বা সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে দিতে হবে। সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ককর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান করতে হবে। উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট মূল্য সংযোজন ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া; এইচএস কোডভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্কহারগুলো হ্রাস করে পাশের দেশগুলোর সঙ্গে শুল্কহার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা দিতে হবে। চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধারকৃত সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বাজুস।

news24bd.tv/আইএএম