সতর ঢেকে রাখা প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা

সতর ঢেকে রাখা প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা

 মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম

সতর ঢেকে রাখা ফরজ! অনেকে হয়তো সেটা জানে না। আবার অনেকে জানলেও গুরুত্ব দেয় না। ফ্যাশন, স্মার্টের নামে আমাদের দেশে ভিন্ন সংস্কৃতি চালু হয়েছে! ফলে সতর ঢেকে রাখার বিষয়টা যেন এমন যে ‘আরে এটা আহামরি কোনো বিষয় না, গুপ্তস্থান ঢেকে রাখলেই যথেষ্ট!’ অথচ এটি মুসলমানদের জন্য ফরজ বিধান। ফরজ বিধান কখনো পরিবর্তন হওয়ার নয়।

আপনি মানেন কিংবা না মানেন, যেটা ফরজ, ওটা ফরজই থাকবে।

ইসলাম আপনার মুখাপেক্ষী নয়, বরং মুসলিম দাবি করতে আপনাকে ইসলামের মুখাপেক্ষী হতে হবে। মুসলিম সে, যে নিজেকে সোপর্দ করে দেয় ইসলামের কাছে। সুতরাং ইসলামের কর্তব্য-নির্দেশ আপনাকে মেনে চলতেই হবে।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০)

পর্দা করা, লজ্জাস্থানের হেফাজত করার কথা বললেই মানস্পটে ভেসে ওঠে একজন বোরকা-নিবৃত্ত নারী! অথচ অবাক করা বিষয় হলো, আয়াতের প্রথম ভাগেই বলা হয়েছে পুরুষকে লক্ষ্য করে।

সতর ঢাকা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। আজকের আলোচনা পুরুষকে নিয়ে। কারণ বর্তমান সমাজে পুরুষরা এ ব্যাপারে বেশ গাফেল।

বর্ণিত আয়াতে লজ্জাস্থানের অর্থ ব্যপক। এমন বস্তু, যা দেখে অন্তরে কুপ্রবৃত্তি জাগে, তা দেখা থেকে বিরত থাকা; শরীরের এমন অঙ্গ, যা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে হাদিসে, তা গোপন রাখা এবং অবৈধভাবে কামভাব চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকা লজ্জাস্থানের অন্তর্ভুক্ত।

অন্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সতর ঢাকার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘হে বনি আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা দ্বারা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)

পোশাকের মাধ্যমে মুমিন গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদন করবে। ‘সতর ঢাকা ফরজ’ এটি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত! শরীরের কতটুকু অংশ এবং কোন অঙ্গ সতরের অন্তর্ভুক্ত, তা লিপিবদ্ধ আছে হাদিসে। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর। ’ (দারা কুতনি, হাদিস : ৯০২)

অথচ অনেক মুসলিম যুবকদের দেখা যায় হাফপ্যান্ট পরে শহরে ঘুরে বেড়াতে! এতে তো লজ্জাবোধ করেই না, বরং নিজেদের স্মার্ট ভাবে। খুব একটা ভাব নিয়ে, দর্পভরে হাঁটে! একসময় মানুষ হাফপ্যান্ট পরিধান করা, উদোম গায়ে হাঁটাকে খারাপ মনে করত! টিভি-সিনেমার কল্যাণে এখন নর্মালাইজ হয়ে গেছে। হাফপ্যান্ট পরে শিক্ষকের সামনে ছাত্র হাঁটছে, বাবার সামনে ছেলে হাঁটছে। অনেক সময় সাদা পাজামা পরেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গোসল করার সময় ভেতরের দৃশ্য ফুটে ওঠে পাজামার বাইরে। তখন গামছা কিংবা কোনো কাপড় কোমরে জড়িয়ে প্রয়োজনীয় হাজত পূরণ করা!

এ তো বললাম জনসমক্ষে থাকাকালীন কথা, একাকী থাকার সময়ও সতর ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাদিসে। রুমে একা, কেউ নেই—তবু সতর ঢেকে রাখতে হবে; কেউ থাকুক বা না থাকুক, ফেরেশতা তো আছেন। তারচেয়ে বড় কথা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সব দেখছেন! তিনি আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন!