বাংলাদেশে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চায় আইএমএফ

সিঙ্গাপুরে আইএমএফের ভার্চুয়াল ব্রিফিং। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চায় আইএমএফ

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিনিময় হার আরো বাজারভিত্তিক (নমনীয়) করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা এ পরামর্শ দিয়েছে, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করেনি। বরং দেশের ব্যাংকিং সংস্থা পর্যায়ক্রমে বিনিময় হার ঘোষণা করে।

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে এখনো ঘাটতি আছে।

এই ঘাটতি মেটাতে উচিত হবে নমনীয় বিনিময় হার চালু করা।

সিঙ্গাপুর থেকে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, 'একবার এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের বাহ্যিক হিসাবে বড় আকারের স্থিতিশীলতা আসবে। '

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আইএমএফ এই পরামর্শ দিয়েছে কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করেনি।

বরং দেশের দুটি ব্যাংকিং সংস্থা পর্যায়ক্রমে বিনিময় হার ঘোষণা করে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে লেনদেনের ভারসাম্যের অন্যতম একটি উপাদান চলতি হিসাবের ব্যালেন্স ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

আর্থিক হিসাবের মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ঘাটতি এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি। গত কয়েক বছরে বিশ্বের অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতিতে এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

পুরো বিশ্বের মতো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। এসব বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, এই ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য রাজস্বনীতির সংস্কার যেমন দরকার, তেমনি দরকার মুদ্রা বিনিময় হারও নমনীয় করা।

কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, বিনিময়হারের সংস্কার এবং আর্থিক নীতির উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশের উচিত আরো টেকসই পুনরুদ্ধার করা। কারণ এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ একাধিক কারণে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি চলমান। এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা গত বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে। আইএমএফ দুই কিস্তির অর্থ এরই মধ্যে ছাড় করছে। আগামী মাসে তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা। বাংলাদেশকে এ ঋণ পেতে বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে।  

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে আইএমএফের কাছে দেশীয় কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে আছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা মোকাবেলা। আইএমএফ এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। আর তাই সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন কিছুটা ভালো করছে বাংলাদেশ। মুদ্রানীতি কাঠামো ও রাজস্ব আদায়ে উন্নতি হয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছিল, তা হলো চলতি হিসাব। ’

আইএমএফ মনে করছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৫.৭ শতাংশ। এ হার গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম। আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ শতাংশ। আইএমএফ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৬.৬ শতাংশ।  

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকার জন্য আর্থিক হিসাব ভালো না থাকাকেও দায়ী করেন কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন। একই কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা টাকাও চাপের মধ্যে রয়েছে।

news24bd.tv/DHL