এপ্রিলজুড়ে স্বর্ণের দামে উত্থান-পতনের রেকর্ড

এপ্রিলজুড়ে স্বর্ণের দামে উত্থান-পতনের রেকর্ড

অনলাইন ডেস্ক

গেলো এপ্রিল মাস জুড়ে উত্থান-পতনে টালমাটাল ছিল দেশের স্বর্ণের বাজার। মোট ১২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। দাম কমেছে ৮ বার। এর মধ্যে টানা ৭ দফায় স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে মোট ৮ হাজার ৩৮৭ টাকা।

বাজুস বলছে, এপ্রিলে এ বছর ১২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এটি এক মাসে সবচেয়ে বেশি দাম সমন্বয়ের রেকর্ড। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য কমছে। যার ফলে দামও নিম্নমুখী।

সবশেষ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে ভরিতে ৪২০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকা নির্ধারণ করেছে বাজুস।

মাসটি শুরু হয়েছিল দাম বাড়ার প্রবণতা দিয়ে। গত ৬ এপ্রিল ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে একভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৫৭৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৪ হাজার ৭৭০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৮ হাজার ৯৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

একদিন বিরতি দিয়ে ৮ এপ্রিল ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে একভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ২০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৬ হাজার ২২৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৮০ হাজার ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর দশ দিনের ব্যবধানে গত ১৮ এপ্রিল ফের দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে একভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা। যা এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে ১ হাজার ৩৮৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৮ হাজার ৮০১ টাকা।

তবে রেকর্ড দাম নির্ধারণের পর একদিন বিরতি দিয়ে গত ২০ এপ্রিল স্বর্ণের দাম ভরিতে ৮৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাজুস। স্থানীয় বাজারে ১ ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ১৯৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

দাম কমানোর পরদিন অর্থাৎ ২১ এপ্রিল স্থানীয় বাজারে ফের স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। সেদিন ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপরেই ধস নামে স্বর্ণের বাজারে। মাসের শেষ আট দিনে টানা ৭ দফায় কমানো হয় স্বর্ণের দাম। গত ২৩ এপ্রিল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে গত ২৪ এপ্রিল ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১০০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯ হাজার টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত ২৫ এপ্রিল ফের ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ভরিতে ৬৩০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৬০ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৮ হাজার ৪০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯২ হাজার ৯১৫ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৪ হাজার ৮০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

একদিন বিরতি দিয়ে ২৭ এপ্রিল ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬২৯ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। তবে ২ হাজার ৪১ টাকা বাড়িয়ে সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৮৪২ টাকা। এছাড়া দাম কমিয়ে ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয় ৯২ হাজার ৪০২ টাকা।

এরপর টানা তিন দিন অর্থাৎ ২৮-৩০ এপ্রিল দেশে স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ২৮ এপ্রিল ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৩১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৬১৬ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯২ হাজার ১৪৬ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা।

পরদিন ২৯ এপ্রিল ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৪৬১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯১ হাজার ২০১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৫ হাজার ৮৩৯ টাকা।

সবশেষ গত ৩০ এপ্রিল চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে ভরিতে ৪২০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকা নির্ধারণ করেছে বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬ হাজার ২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯০ হাজার ৮৬৩ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ৫৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটাই বর্তমানে দেশের বাজারে স্বর্ণের সমন্বয়কৃত সবশেষ দাম।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের এ উঠানামা মূলত বিশ্ববাজারের দামের কারণেই বলে জানিয়ে বাজুস।

বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতা ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার নির্ধারণ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অস্থির স্বর্ণের বাজার। বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকায় স্থানীয় বাজারেও কমছে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম।

এদিকে, গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে রেকর্ড ছুঁয়েছে স্বর্ণের দাম। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় গত ১২ এপ্রিল লেনদেনের এক পর্যায়ে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠে যায় ২৪৩১.৫১ ডলারে। তবে বর্তমানে সে ধারা নিম্নমুখী।

news24bd.tv/SC