‘কণ্ঠের সুরক্ষায় আরো যত্মবান হোন’

সংগৃহীত ছবি

‘কণ্ঠের সুরক্ষায় আরো যত্মবান হোন’

নিউজ টোয়েন্টিফোর হেলথ

কণ্ঠ শুধুমাত্র যোগাযোগের প্রধান উপায় নয়। বাক্যের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা ব্যবহার করা শব্দের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে তার ৩৮ শতাংশ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার অপর। তাই দৈনন্দিন সাংসারিক বা কর্মক্ষেত্রে কথাবার্তার জন্য ভালো কণ্ঠের গুরুত্ব অনেক বেশি।

কণ্ঠের সুরক্ষায় অবহেলা নয়, বরং যথেষ্ট যত্মবান হতে হবে।  

বিশ্ব কণ্ঠ দিবস উপলক্ষে গত রোববার (২৮ এপ্রিল) স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগ আয়োজিত কণ্ঠের যত্মে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

তিনি আরো বলেন, ভাইরাসজনিত, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। যদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে কণ্ঠনালিতে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট হয়, তখন চিকিৎসা দরকার।

পাকস্থলির অ্যাসিড রিফলাক্সের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। অতি উচ্চৈস্বরে অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। গলার স্বর পরিবর্তনের ২১ দিনের মধ্যে ভালো না হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কণ্ঠনালির ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, অনেকেই জানে না তাদের পেশার জন্য সুস্থ ও সুন্দর কণ্ঠ কতটা জরুরি। নিজের কণ্ঠ নিজে শুনতে হবে, যেন কোনো সমস্যা তাড়াতাড়ি আন্দাজ করা যায়। সমস্যা ৩ সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার পানি পান করতে হবে। কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানী হতে হবে। অতিউচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলা যাবে না। অ্যালকোহল, কফি, চা, কোমল পানীয় শরীরের কোষে পানি শূন্যতা ঘটায়। এগুলো অল্প পরিমাণে খেলে সমস্যা নেই, তবে বেশি নয়।  

এছাড়া ধূমপান এবং অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করতে হবে। অল্প করে খেতে হবে। অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার/কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাস যাতে জলীয়বাষ্প কম, কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতাকরণ যন্ত্র ব্যবহার করুন। উড়োজাহাজে বাতাস শুষ্ক থাকে। কফি, চা, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।  

তিনি আরো পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে ৮ আউন্স পানি পান করুন। গলায় গারগিল করা যেতে পারে (১/২ টেবিল চামচ লবণ+ ১/২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা+ ৬ আউন্স হাল্কা গরম পানি)। অনেক সময় গলা শুকনা থাকলে অথবা মিউকাস জমে থাকলে আমরা জোরে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ জন্য যা করবেন- প্রথমে বুক ভরে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, এবারে শ্বাস ছাড়ার সময় আস্তে শব্দ করুন।

তিনি বলেন, এলার্জি বা ঠান্ডার সমস্যায় আমরা হরহামেশা এন্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার করি। এন্টিহিস্টামিন ওষুধ কণ্ঠের শুষ্কতার কারণ। তাই সম্ভব হলে এগুলো এড়িয়ে স্টেরয়েড স্প্রে নাকে ব্যবহার করুন। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারীদের এনএসএআইডি জাতীয় ব্যথার ওষুধ এড়িয়ে চলুন। যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয় তখন মিউকাস তরলকারি ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। স্থানীয় চেতনানাশক যথেচ্ছ ব্যবহার করবেন না। ধোয়া/ধুলা/দূষিত বাতাস এড়িয়ে চলুন। গান গাওয়ার সময় শারীরিক, মানসিক অবসাদ মুক্ত থাকুন। হাল্কা গরম পানিতে গারগিল করতে পারেন। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ডিজিএম আকাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মাজহারুল ইসলাম, জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া সরকার, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সুদীপ দাশ গুপ্ত, সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সাহা এবং শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ডা. এম এ ছাত্তার সরকার প্রমুখ।

news24bd.tv/health