বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ ওঠে না আর

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ ওঠে না আর

বেনু দত্ত

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। কয়েক বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের রাস্তার দুপাশে দেখা যেত প্রচুর বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ের আধিক্যের কারণে রূপকথার গল্প, ভূতের গল্প, বাগধারা, উপকথা, কবিতা সব জায়গায় ঠাঁই করে নিয়েছিল বাঁশ এবং বাঁশঝাড়। মানুষের জীবন যাপনের সরঞ্জামের মধ্যে বাঁশ অন্যতম।

ঘরবাড়ি নির্মাণে, বাগানের বেড়া, লাউয়ের মাচা, খাদ্য হিসেবে কচি বাঁশ, গ্রাম্য চিকিৎসায় কোথায় ব্যবহার করা হয় না বাঁশ? এমনকি শবযাত্রায়ও রয়েছে বাঁশের ব্যবহার।

পৃথিবীর দীর্ঘতম ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ হলো বাঁশ। বাঁশের বৈজ্ঞানিক নাম  Bambusa, Poaceae ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ এটি।

আমি সময় করে গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়াই।

গ্রামে জন্ম বলেই কিনা জানি না গ্রাম, বন-জঙ্গল আমায় ভীষণ টানে। এমফিলের রিসার্চ করার সময় আমরা একরকম মোটা বাঁশের মাইক্রোপ্রোপাগেশন করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল ল্যাবরেটরিতে হাজার হাজার চারা উৎপন্ন করে বাঁশের সেই বিরল জাতটিকে আমরা বনে-জঙ্গলে, গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেব। অনেক চারা বানালাম। জাহাঙ্গীরনগরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এখনো সেই মোটা জাতের বাঁশঝাড় রয়েছে। কিন্তু সেই বিরল প্রজাতি তো বিরলই রয়ে গেল। পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে একবার তেতুলিয়ার এক গ্রামে সেই প্রজাতির মোটা বাঁশের ঝাড়ের দেখা পেয়েছিলাম।

এভাবে মাত্র কয়েকবছরের মধ্যে বাঁশঝাড় প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে কেউ ভাবেনি। হতে পারে বাঁশঝাড় হওয়ার জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ লাগে তা আমরা নষ্ট করে ফেলছি। বাঁশের অতিরিক্ত ব্যবহার বাঁশঝাড় নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। বাঁশঝাড় পরিস্কার করে আমরা বাড়ি-ঘর বানাচ্ছি।

পার্বত্য অঞ্চলে গেলে এখনও বেশ বাঁশঝাড় চোখে পরে। কিন্তু পাহাড়ি মানুষ খাদ্য হিসেবে যে পরিমাণ কচিবাঁশ ধ্বংস করে, অচিরেই সেসব এলাকার ঝাড়গুলোও হারিয়ে যাবে। প্রাকৃতিক ভাবেই সবসময় বাঁশঝাড় গড়ে ওঠে। তাদের জন্য কোনো যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। শুধু তাদের আবাসভূমিতে কম বিচরণ করলেই নতুন নতুন চারা গজিয়ে উঠে বিস্তৃত হয় ঝাড়। কিন্তু আমরা সেই চারাগাছগুলোই যদি কেটে খেয়ে ফেলি তাহলে তারা কীভাবে বাঁচবে? এই সর্বভুক মানুষের কাছে কি প্রকৃতির আর সব প্রজাতিই নত হয়ে থাকবে আজীবন! বাঁশ বাগানের মাথার উপর কি আর চাঁদ দেখতে পাবে না আমাদের সন্তানেরা? আসুন প্রকৃতি বাঁচাই এবং নিজেরা বাঁচি। আমরাও তো প্রকৃতির সদস্য। অন্য সদস্যরা ধ্বংস হয়ে গেলে আমরা কীভাবে বেঁচেবর্তে থাকব বলুনতো!

লেখক- বেনু দত্ত, প্রকৃতি সন্ধানী

news24bd.tv/তৌহিদ