নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের বহিষ্কারের পরিকল্পনা নেই আওয়ামী লীগের

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের বহিষ্কারের পরিকল্পনা নেই আওয়ামী লীগের

অনলাইন ডেস্ক

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এমনকি কোনো প্রার্থীর ব্যালটে প্রতীক হিসেবে নৌকাও ব্যবহৃত হচ্ছে না। দলের কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়া না হওয়া নিয়ে এক ধরনের বিধি-নিষেধ জুড়ে দিলেও সামগ্রিক বাস্তবতায় সেটিও বড় ভূমিকা রাখছে না। ফলে দলের নির্দেশ না মানলেই বহিষ্কার করা হবে—এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।

সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ চাইছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে যেন মন্ত্রী-এমপিদের নিকটাত্মীয়রা সরে যান। কিন্তু এমন প্রার্থীর সংখ্যা খুবই কম। সারা দেশে ৪৭৫টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সব মিলিয়ে আত্মীয় প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫০ জায়গায় হতে পারে।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৪৮টি উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের ১৪ জন প্রার্থী পাওয়া গেছে। সামগ্রিক বিবেচনায় অল্প আত্মীয় প্রার্থীর কারণে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মূল সমস্যা অনুগত প্রার্থীদের নিয়ে। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক অনুসারী এবং অনুগত প্রার্থী ভোট করছেন।

সেখানে স্থানীয় এমপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক। এতে করে নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা আরো বেড়ে যাচ্ছে। যদিও সরকার চাইছে ভোট প্রভাবমুক্ত রাখতে।

এ কারণে আত্মীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে দলের কেন্দ্র থেকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনুগত প্রার্থীদের ওপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেওয়ার মতো সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার এ পর্যন্ত বেশির ভাগ আত্মীয় প্রার্থী ভোট থেকে সরছেনও না।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কি না আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। কারো মতে আত্মীয়দের প্রার্থী হওয়া দোষের নয়। তাঁরা (আত্মীয় প্রার্থীরা) যদি আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় জড়িত থাকেন, তাঁদের যদি জনপ্রিয়তা থাকে, তাহলে তাঁরা কেন ভোট করতে পারবেন না? আবার অন্য পক্ষ বলছে, ভোট প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য হলেও তাঁদের সরে দাঁড়ানো উচিত।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোট করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাঁদের বহিষ্কার করা হবে কি না সেটাও এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। মিডিয়ায় এ নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি হচ্ছে। তাই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তোলা হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে দল। ’

ভোটে অনুগত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। অনুগত প্রার্থীর হাত ধরেও ভোট প্রভাবিত হতে পারে। কারণ স্থানীয় এমপি তাঁর রাজনৈতিক অনুসারী কিংবা পছন্দের কর্মীকে প্রকাশ্যে বা গোপনে সমর্থন করবেন, এটা অনেকটা স্বাভাবিক। এ জন্য ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আবার এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। ফলে একই উপজেলায় আওয়ামী লীগেরই একাধিক নেতা ভোটে অংশ নিচ্ছেন। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে দলের ভেতর কোন্দল-বিভেদ-দ্বন্দ্ব বাড়লেও কেন্দ্র সরাসরি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ কোনো প্রার্থীই বিদ্রোহী প্রার্থী নন। দল প্রার্থী ও প্রতীক না দেওয়ায় ভোট হচ্ছে উন্মুক্ত।

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে পুরো বিষয়ের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। দলীয় সূত্র বলছে, কোন্দল কমাতে এবং প্রভাবমুক্ত নির্বাচন বাস্তবায়নে আত্মীয় প্রার্থী সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটা করা সম্ভব। সব প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরবেন না—এটাও কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাবনায় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে কেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা পরে দল থেকে ঠিক করা হবে।

এদিকে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে দুই ধরনের মত দিয়েছেন। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারির পাশাপাশি সাধারণ ক্ষমার দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে। আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না, তাঁদের ব্যাপারে সময়মতো দল সিদ্ধান্ত নেবে। ’

চূড়ান্ত পর্যায়েও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ ক্ষমা একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল, সেটি হতেই পারে। সেটি দলের সভাপতি নিতে পারেন।

দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানতে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলা হচ্ছে। প্রার্থীরা যে অভিভাবকের ভরসায় ভোট করছেন, কেন্দ্র থেকে সেই অভিভাবকের সঙ্গেই কথা বলা হচ্ছে। তবু অনেকে ভোটের মাঠে থাকতে চাইছেন।

এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনের আলোচনা গুরুত্ব পাবে আওয়ামী লীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দলীয় সূত্র বলছে, কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্যকারী প্রার্থীদের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে। দলের সাংগঠনিক পর্যায় থেকে প্রার্থীদের নিয়ে প্রস্তুত করা তালিকাও উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে দল। কিন্তু বৈঠকে দলীয় নির্দেশ না মেনে ভোটে থাকা প্রার্থীদের তালিকা উপস্থাপন এজেন্ডায় নেই। এজেন্ডার বাইরে রেখেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

news24bd.tv/DHL