খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবসে দেশব্যাপী সিপিবির কর্মসূচি

সংগৃহীত ছবি

খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবসে দেশব্যাপী সিপিবির কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় ও জেলায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া খাপড়া ওয়ার্ড স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজশাহীতে ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে খাপড়া ওয়ার্ডে শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে পুস্তস্তবক অর্পণ, খাপড়া ওয়ার্ড  শহীদ দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি ও খাপড়া ওয়ার্ডের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও তাৎপর্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান ও লাল পতাকার মিছিল। এছাড়া বিকাল ৩টায় সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

আলোচনা করবেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোট এর সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাগীব আহসান মুন্নাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ । সভাপতিত্ব করবেন সিপিবি রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ইসমাইল হোসেন।

এদিন খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে সিপিবির উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা ও রাজশাহীতে এবং দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হবে। ঢাকায় বিকাল ৫টায় মুজাফ্ফর আহমদ মিলনায়তনে (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২য় তলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন সিপিবির সভাপতি মৈ. শাহ আলম।

একইসাথে খাপড়া ওয়ার্ড স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একই স্থানে ঐদিন বিকাল ৪টায় 'খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ড : বিপ্লবীদের স্বপ্নের ভবিষ্যৎ' শীর্ষক স্মারক বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু।

উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কারাগারের মধ্যে থাকা খাপড়া ওয়ার্ডে আটক কমিউনিস্ট ও বামপন্থি রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়।

সেই নৃশংস ঘটনায় সাত জন নিহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিল ৩২ জন। সেই থেকে দিবসটি এই উপমহাদেশে ‘খাপড়া ওয়ার্ড হত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করা হয়।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তৎকালীন মুসলিম লীগের শাসকরা প্রথম আঘাত করেন এ দেশের কমিউনিস্ট ও বামপন্থি সমর্থক কৃষক, শ্রমিক এবং ছাত্র সমাজের ওপর। ১৯৪৮–৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়।

সেসময়ে রাজশাহী অঞ্চলে কমিউনিস্ট নেত্রী ইলা মিত্রের নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহের নেতৃত্বে এবং যশোরের আব্দুল হকের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়। এ সময় গোটা বাংলায় কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

সরকার কৃষক আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সারাদেশে শতশত নেতাকর্মীকে আটক করেছিল। এছাড়া ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে এমন ঘোষণা দিলে সারাদেশে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। সে সময় ভাষা আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করে জেলখানায় আটক রাখা হয়।

১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে রাজবন্দীদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে একটি বিল পাস করলে সারাদেশের সব জেলখানায় রাজবন্দীদের মধ্য তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। সে সময় জেলখানায় আটক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা জেলের অভ্যন্তরে আন্দোলন শুরু করেন।

জেলখানায় বন্দিদের সঙ্গে অসদাচরণ বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি পেশসহ বন্দিরা অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কারাগারে আটক রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে জেল কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলাকালে মতবিরোধ দেখা দিলে তৎকালীন জেলার বিনা উসকানিতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে বন্দিদের ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন এবং জেল পুলিশ খাপড়া ওয়ার্ডে অবস্থানরত বন্দিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৭ জন বন্দিকে হত্যা এবং ৩২ জনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করেন।

সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত বিপ্লবীরা হলেন- 
১. বিজন সেন ( রাজশাহী), ২. কম্পরাম সিংহ (দিনাজপুর), ৩. হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), ৪. সুধীন ধর (রংপুর), ৫. দেলোয়ার হোসেন (কুষ্টিয়া), ৬. সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ) এবং ৭. আনোয়ার হোসেন (খুলনা)।

নিহত বিপ্লবীদের মধ্যে সুধীন ধর এবং বিজন সেন ছিলেন রেল শ্রমিক। হানিফ শেখ ছিলেন কুষ্টিয়া মোহিনী মিলের শ্রমিক নেতা। সুখেন্দ ভট্টাচার্য ছিলেন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের স্নাতক পরীক্ষার্থী। দেলোয়ার হোসেন ছিলেন রেলওয়ের লাল ঝান্ডা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এবং আনোয়ার হোসেন ছিলেন খুলনার দৌলতপুর কলেজের ২ বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্র ফেডারেশনের নেতা।

গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন- ১. সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লাহ (মুর্শিদাবাদ এর অধিবাসী। ১৯৭৭–৮২ সময়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার স্পিকার ও সাবেক আইনমন্ত্রী) ২. আব্দুস শহীদ (বরিশাল) ৩. আব্দুল হক (যশোর) ৪. কমরেড প্রসাদ রায় (পাবনা) ৫. আমিনুল ইসলাম বাদশা (পাবনা) ৬. আশু ভরদ্বাজ ৭. সত্যেন সরকার ৮. নূরুন্নবী চৌধুরী ৯. প্রিয়ব্রত দাস ১০. অনন্ত দেব ১১. গনেন্দ্র নাথ সরকার ১২. নাসির উদ্দিন আহমেদ ১৩. শচীন্দ্র ভট্টাচার্য ১৪. সাইমন মন্ডল ১৫. কালিপদ সরকার ১৬. অনিমেষ ভট্টাচার্য ১৭. বাবর আলী (দিনাজপুর) ১৮. গারিস উল্লাহ সরকার ১৯. ভুজেন পালিত (দিনাজপুর) ২০. ফটিক রায় ২১. সীতাংশু মৈত্র ২২. সদানন্দ ঘোষ দস্তিদার ২৩. ভোলারাম সিংহ ২৪. সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য ২৫. লালু পান্ডে ২৬. মাধব দত্ত ২৭. কবীর শেখ ২৮. আভরন সিংহ ২৯. সুধীর স্যানাল ৩০. শ্যামাপদ সেন (বগুড়া) ৩১. হীরেন সেখ ৩২. পরিতোষ দাস গুপ্ত।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক