কেউ কাপড় বুনন করছে। কেউ তুলা থেকে সুতা বের করে চরকাই দিচ্ছে। আর কেউ বা ব্যস্ত কাপড় সেলাই ও রং করার কজে। রিতি অনুযায়ে এ উৎসবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীরা ২৪ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরি করে ভিক্ষুদের দান করবে।
এ উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো পার্বত্যাঞ্চল। ঢল নামছে অগণিত পুণ্যার্থীর।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় দুদিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। বেলা আড়াই টায় সূত্রপাঠ করে বেইনঘর উদ্বোধন করেন মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্যমণ্ডলী। এ সময় রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবিরসহ রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুসংঘ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৩টায় ফিতা কেটে বেইন ঘর উদ্বোধন করেন, রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। একই সময় চরকায় চরকায় সুতা কেটে বেইন বুনন উদ্বোধন করেন, রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মীনি ইয়েন ইয়েন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের তথ্য ও প্রচার কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম, শান্তির ধর্ম। এ উৎসবের সকল প্রাণীকুলের জন্য মঙ্গল কামনা করা হবে। যাতে পাহাড়ের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। দুই দিন ব্যাপী ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠান চলবে। এ উৎসবে সব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন মেলা হয়।
রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান জানান, বার দানোৎসবে ১৮৬টি বেইন (কোমর তাঁত) বসানো হয়েছে। প্রতিটি কোমর তাঁতে চারজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী কাপড় বুনন করে। আর অন্যরা যার যার মত কাজে সহায়তা করছে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে হবে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে। তাই এ উৎসবের নামে নামকরণ করা হয়েছে কঠিন চীবর । এ কঠিন চীবর উৎসর্গ করা হবে রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ বৌদ্ধ আর্যপুরুষ সর্বজনপূজ্য মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তকে।
এছাড়া সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জালনের ও রঙিন ফানুস উড়ানোর মধ্যে শেষ হবে রাঙামাটি মাস জুড়ে চলে আসা কঠিন চীবর দানোৎসব (মহাপুণ্যযজ্ঞ)। এরই মধ্যে রাঙামাটি রাজবন বিহারে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। তাই উৎসবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো রাজবন বিহার এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানায় রাঙামাটি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
NEWS24▐ কামরুল