বছরজুড়েই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের দুটি বধ্যভূমি। একটি ছেয়ে আছে ঝোপঝাড়ে, অন্যটিতে পোকামাকড়ের ঘর বসতি। আবার কখনো কখনো গরু-ছাগলও চরে বেড়ায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের প্রাক্কালেও গেটবিহীন তিন ফিট সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা বধ্যভূমিতে নেই কোনো স্মৃতিফলক।
স্থানীয়রা জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস সামনে এলে এসব বধ্যভূমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। অন্য সময় কেউ খোঁজও নেয় না। দুটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের আবেদন করা হলেও প্রশাসন এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য, গাজীপুরের শ্রীপুর ছিল পাক হানাদারদের প্রধান ঘাঁটি।
সাতখামাইর বধ্যভূমি (গণকবর): উপজেলার বরমীর সাতখামাইর থেকে জৈনা যাওয়ার আঞ্চলিক সড়কের পাশে এ বধ্যভূমির নতুন ফটকের কাজ শুরু হলেও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ভেতরে ঝোপজঙ্গল হয়ে রয়েছে।
সাতখামাইর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিম উদ্দিন আকন্দ জানান, ওই এলাকার আব্দুস ছাত্তার, ইউসুফ আলী, আজম আলী, আব্দুল লতিফ, গিয়াস উদ্দিন ও ছনু মোলস্নাসহ মোট ১০ জনকে নির্যাতনের পর একে একে বেঁধে এনে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পর তাদের সাতখামাইরে গণকবর দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে সাত মাসের সন্তান সম্ভবা সালেহা এবং অপর তরুণী শিরীনকে পাক হানাদাররা শ্রীপুরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে শ্রীপুরের জিনেজানের রেলসেতুর কাছ থেকে তাদের মাথার চুল, কঙ্কাল উদ্ধার করে গণকবর দেওয়া হয়। এর আগে সাতখামাইরে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় সাত নিরীহ ব্যক্তিকে।
শ্রীপুরের বধ্যভূমি: সেকসন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়ার উদ্দিন বলেন, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজ মাঠের একপাশে ১২ জন শহীদের গণকবর রয়েছে। কেওয়া আকন্দবাড়ীর নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাড়ি থেকে তার বাবা ফকির আলমগীর বাদশাকে ধরে এনে হত্যা করে। তার বাবার সঙ্গে কমপক্ষে আরও ১১ জনকে হত্যার পর সেখানে গণকবর দেওয়া হয়।
কয়েলের আগুনে পুড়ল গরু-ছাগল-হাস-মুরগী ও টাকা
আমি অনেক ক্লান্ত : থানা থেকে বের হয়ে ‘শিশুবক্তা’ (ভিডিও)
'শিশু বক্তা' দীর্ঘদিন ধরেই গ্রেপ্তার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন
শ্রীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের এক রাতে আমি বাড়ি থেকে কাপাসিয়ার উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা হলাম। কলেজের কাছাকাছি যেতেই কারও গোঙানির আওয়াজ পেলাম। উঁকি দিয়ে দেখি, ১০ থেকে ১৫ জনের পাক হায়েনার দল এক যুবককে নির্যাতন করতে করতে হত্যা করছে। পরে জানতে পেরেছি, তিনি উজিলাব গ্রামের আওয়ামী সমর্থক ওমর আলী।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (সাবেক) সিরাজুল হক বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর হলেও প্রকাশ করা হয়েছে রাজাকারদের প্রাথমিক তালিকা। রাজকারদের সহযোগিতা ও হানাদারদের নৃশংসতায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পরে উপজেলা পরিষদ থেকে সেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। এরপর দীর্ঘদিন কেটে গেছে। কিন্তু স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হয়নি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রধান বলেন, আমার উদ্যোগে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজ মাঠের একপাশে শহীদের গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে সেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং দ্রম্নত সময়ের মধ্যেই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
news24bd.tv তৌহিদ