নতুন বছরে যেসব পরিবর্তন আসছে শিক্ষাক্রমে

নতুন বই পেয়ে শিক্ষার্থী (ফাইল ছবি)

নতুন বছরে যেসব পরিবর্তন আসছে শিক্ষাক্রমে

অনলাইন ডেস্ক

দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে গেলেও নতুন শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম পুরোপুরি বাতিল হচ্ছে না। তাই কবে থেকে কতটুকু পরিবর্তন হচ্ছে শিক্ষাক্রম- এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছর হাতে প্রয়োজনীয় সময় নেই। দ্রুত বই ছাপার কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই আগামী বছর ২০১২ সালের কারিকুলাম সামান্য সংশোধন করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে।

আর ২০১২ ও ২০২৩ সালের কারিকুলামের সমন্বয়ে ২০২৬ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে পরিমার্জিত কারিকুলাম তুলে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া আগের মতো নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বেছে নেওয়া এবং এক বছরে শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে পরিপত্রও জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু আগামী বছরের জন্য আমরা ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাচ্ছি। ওই কারিকুলামে যেসব ভুলভ্রান্তি আছে তা সংশোধন ও যতটুকু পরিমার্জন করা যায়, তা করব। তবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের আগে আমাদের অনেক সময় আছে। তখন ২০১২ সালের কারিকুলামের সঙ্গে ২০২৩ সালের নতুন কারিকুলাম মিলিয়ে একটা পরিমার্জিত কারিকুলাম দেওয়া হবে। ’

জানা যায়, দেশে ২০১২ সালে চালু হয়েছিল সৃজনশীল পদ্ধতিতে লেখাপড়া। মুখস্থবিদ্যাকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল এর লক্ষ্য। এই কারিকুলামে ১১ বছরে শিক্ষার্থীরা যখন অনেকটাই আত্মস্থ হয়ে উঠেছিল, তখনই তা বাদ দিয়ে ২০২৩ সাল থেকে চালু করা হয় নতুন শিক্ষাক্রম। আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা ছিল এই কারিকুলাম নিয়ে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা  দেবে। এ বছর তারা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত পাঠ্য বই পড়ছে এবং এরই মধ্যে ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে অংশ নিয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে এই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত বইয়ের ওপর আগের মতো সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষায় বসবে। কিন্তু আগামী বছর তাদের বই পরিবর্তন হয়ে যাবে। এমনকি আগের মতো বিভাগ বিভাজনও থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্য বই তাদের সরবরাহ করা হবে। সে কারণে তাদের ওপর বাড়তি চাপ এড়াতে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, সৃজনশীল পদ্ধতিতে হবে।

জানা যায়, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য আগের শিক্ষাক্রম অনুসারে প্রণীত বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখাভিত্তিক একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে। আর আগামী বছর থেকে নবম ও দশম শ্রেণিতে আগের মতো পৃথক বই পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একাধিক দল পাঠ্য বই নিয়ে কাজ করছে। প্রতিটি বিষয়ে দু-তিনজন করে বিশেষজ্ঞ বই পরিমার্জনের কাজ করছেন। ’

আরও জানা যায়, আগামী বছর নবম শ্রেণিতে ২০১২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্য বই দেওয়া হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবে। তবে আগামী বছর থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে ২০১২ সালের সংশোধিত কারিকুলামের পাঠ্য বই।

প্রাথমিক স্তরের বিষয়ে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতেও ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে আসা হবে। তবে ২০২৬ সালে বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে পাঠ্য বইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন কারিকুলামের আওতায় আসেনি। তাই তারা অনেকটাই নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। তারা তাদের মতো করেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বইগুলো সংশোধনের কাজ প্রায় শেষের পথে। জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে এ মাসের মধ্যেই আমরা বই ছাপানোর দরপত্র আহ্বান করব। ’

news24bd.tv/আইএএম