প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর। আমার মনে হয় বাংলাদেশে বা পুরো বিশ্বে এমন কেউ নেই যে, এ বাক্যটি শোনেনি বা পড়েনি। সারা বিশ্ব করোনা আতঙ্কে ভুগছে। আমরা বাংলাদেশিরা এ আতঙ্ক থেকে মুক্ত, তা তো বলা যায়ই না, বরং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পর্যন্ত করোনা আশঙ্কায় স্থগিত করা হয়েছে।
কিন্তু আমরা তো ভিআইপি নই, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। সেই সাধারণ মানুষ হিসেবে এখানেই আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আচ্ছা বলুন তো, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্র বা ছাত্রী ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকেন, তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাবেন? নিশ্চয়ই গণপরিবহন ছাড়া উপায় নেই। স্কুল, কলেজের ক্ষেত্রেও একই কথা। যারা সমাজের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা আমার মতো গাড়িতে চড়েন, তারা হয়তো খুব আত্মতৃপ্তিতে আছেন- যাক, আমার বা আমার সন্তানের তো আর গণপরিবহনে চড়তে হয় না। কিন্তু ভাই ও বোন সকল! আপনি যখন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার সন্তানদের পাঠাচ্ছেন; সেটি গাড়িতেই হোক না কেন, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তো তাকে জনসমাগমের মধ্যেই পড়তে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক একটি ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী ক্লাস করেন, ধারণা আছে আপনাদের? অথবা একটি কলেজের বা স্কুলের এক একটি শ্রেণিতে কতজন শিক্ষার্থী থাকে? জনসমাগম মানে কী? হাজারো মানুষ জড়ো হলেই কি জনসমাগম? যে শিক্ষার্থী গণপরিবহন ব্যবহার করে ক্লাসে আসছে, সেই বাস কতজন প্রতিদিন ব্যবহার করে হিসাব কষেছেন কি? সেই বাসের রেলিং, হ্যান্ডেল, সিট না ধরে, বাসে ছোঁয়া বাঁচিয়ে কি চলা সম্ভব? সেই তারা যখন ক্লাস করছে, অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, নয় কি?
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না হওয়ার কথা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। খুবই ভালো কথা। পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক তো নয় এখনো। মাত্র তিনজন আক্রান্ত। কিন্তু তিনজনের জন্য যে ৪০ জনকে কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয়েছে, সেই চিন্তা কি করেছেন? আমার একটি ক্লাসে ৬৫ জন করে শিক্ষার্থী থাকেন। এদের একজনও যদি আক্রান্ত হন, তবে আমিসহ তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ কতজনকে কোয়ারেনটাইন করে রাখা হবে, সেই অঙ্ক কষেছেন কি? পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে কি কোনো লাভ হবে! তবে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর কথাটির আবির্ভাব কেন? শুধু মাস্ক পরে বা বারবার হাত ধুয়েও কিছু হবে না, যদি আপনি আক্রান্তদের কাছে থাকেন। জানি, কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। জানি, জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে লাভ নেই। কিন্তু রোগটি যাতে না ছড়ায়, সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কী হয় যদি ৭/১০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে? কী হয় যদি আমাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছুদিনের জন্য নিরাপত্তা দেওয়া হয়? বলতেই পারেন ৮/১০ দিনের ছুটিতে কী হবে? করোনা কি তখন চলে যাবে? না, যাবে না। কিন্তু অনেক কিছুই আবার ভালো হবে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়া তো অন্তত বন্ধ হবে। প্রকোপ কমলে না হয় বন্ধের দিনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে পুষিয়ে নেবেন। আজকে আমার সন্তান যদি স্কুল থেকে অসুখ নিয়ে আসে, আর শত হাজার জনের সঙ্গে মেশে; আমি নিজে যদি সেই অসুখটি আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিই ক্লাসে- দায়ী কে হবে? আমি তো অন্তত ব্যক্তিগতভাবে তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়ী করব। আমি জানি না, কীভাবে আমার প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে ক্লাস করব! যেখানে প্রতি ক্লাসেই ওদের সামনেই ওদের প্র্যাকটিক্যাল খাতা দেখার বিষয়টি থাকে! আপনারা জানেন কি সমাধান? বাসায় এসে হাত ধুয়ে ফেললেই সমাধান? ততক্ষণে সেটি আমায় এবং আমার আশপাশের সবাইকে আক্রান্ত করবে না- কভিড-১৯ কি এ কথা বলে? ছোটবেলায় পরীক্ষার খাতায় অ্যাপ্লিকেশন লেখার একটি ফরম্যাট স্কুলে শেখানো হয়েছিল। সে নিয়ম অনুসরণ করেই আকুল আবেদন জানাচ্ছি সরকারের কাছে, জনস্বার্থে যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনকে সংক্ষিপ্ত করা যায়, জনস্বার্থে কিছুটা দিন আমাদের সন্তানদের নিরাপদে থাকার সুযোগ দিন।
ইতি আপনার বিনীত নাগরিক
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)