প্লাস্টিক বিরোধি সিদ্ধান্তটা অত্যন্ত জরুরি 

ফিরোজ আহমেদ

মতামত

প্লাস্টিক বিরোধি সিদ্ধান্তটা অত্যন্ত জরুরি 

ফিরোজ আহমেদ

রেজওয়ানা আপাকে আন্তরিক একটা ধন্যবাদ জানাই। শুধু পাটজাত পণ্য না, যারা এমনকি পচনশীল প্লাস্টিক বানান, তারাও উৎসাহিত হবেন, প্রণোদনা পাবেন এই সিদ্ধান্তে।  
অনেকেই বলেন, প্লাস্টিক সস্তা, পাটের দাম বেশি! প্লাস্টিকের আসলে দুই রকম দাম আছে। একটা তো হলো দেশের পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি, কৃষির, মৎস্য সম্পদের উৎপাদন হ্রাস।

মায়ের দুধ কিংবা খাবারেও এখন প্লাস্টিকের উপস্থিতি মিলছে। এই লোকসানের দাম কে দেবে?
আরও একটা ভয়াবহ দাম আছে প্লাস্টিকের। গোটা প্লাস্টিক শিল্পটা টিকে আছে অবৈধ একটা কায়দায়। কারণ, শিল্পকারখানার নিয়ম মেনে এই শিল্প করা হলে প্লাস্টিকের ব্যাগের দাম পাটের চাইতে, বা পচনশীল প্লাস্টিকের চাইতে বেশি হবে।

প্রতিবছর লালবাগে ভয়াবহ আগুনে মানুষের মৃত্যু হয়, চুড়িহাট্টা কিংবা  নিমতলীর ভয়াবহ সব ট্রাজেডির কথা আমরা যে ভুলে থাকি, কিংবা আমাদের ভুলিয়ে রাখা হয়, তার সাথে প্লাস্টিক শিল্পের বিরাট ঘুষের কারবারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। পুরো লালবাগ পরিণত হয়েছে একটা বারুদের স্তুপে।
এই মানবিক, বস্তুগত, প্রতিবেশগত ও দুর্নীতির হিসাব করলে পাট ও পচনশীল প্লাস্টিকের দাম কমই হবে প্লাস্টিকের এই মানববিরোধী ব্যবসার চাইতে।  
যতই ক্ষতিকর হোক, ইয়াবা বা হেরোইনের মত মাদকের ব্যবসা যে কারণে টিকে আছে, প্লাস্টিকের ব্যবসা একই কারণেই আছে। দুর্নীতি।
এর শক্তিটা বোঝা যাবে, বাংলাদেশ কিন্তু সবার আগে প্লাস্টিক মুক্ত হতে শুরু করা দেশগুলোর মাঝে একটা ছিলো। বিএনপি আমলের পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ বাজারগুলোকে প্রায় মুক্ত করেছিলেন।
তারপর? তারপর স্বৈরশাসন। দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্য। জবাবদিহিতাহীনতা। মুখের ঠিক নাই এমন এক দুর্বীনিত মানুষের শাসন। এবং প্লাস্টিকের রাজত্ব আবারও ফিরে আসা।
এই ভালো খবরের সময়েই একটা উদ্বেগের বিষয় হলো, বন্যার অজুহাত ব্যবহার করে কীটনাশক আমদানিতে শুল্কহার ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। এটা অবশ্য করেছে এনবিআর, কিন্তু দেশের পরিবেশের ওপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব রাখবে এটা।
কীটনাশকগুলোর চমৎকার সব বিকল্প আছে, বিষয় শুধু এটা নয়। কীটনাশক আমাদের যে সব রোগব্যাধির জন্ম দিচ্ছে, ক্যান্সার আর কিডনির ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা, তা নিয়ে অজস্র গবেষণা সরকার পর্যায়েই হয়েছে।
রেজওয়ানা আপার কাছে অনুরোধ থাকবে, এনবিআরকে এমন সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত আনুন।
বরং প্রতিবছর কীটনাশকের ওপর কর বৃদ্ধি করুন। বিকল্প পদ্ধতিগুলোকে আর্থিকভাবে প্রণোদিত করুন।
 কীট দমনে প্রাকৃতিক উপায়গুলো যদি বৈজ্ঞানিকভাবেই টেকসই প্রমাণিত হয়, তাহলে সেগুলোকে মাঠ পর্যায়েও আরও কার্যকর করে তোলার উদ্যোগ নিতে কৃষি বিভাগকে বাধ্য করুন।
আমাদের কৃষিবিভাগগুলো, দফতর ও অধিদফতরগুলো যেন পরিবেশ বিধ্বংসী কারবারের মুনাফার মাধ্যম না হয়।
দেশবাসী আপনার পাশে থাকবে!
লেখক : গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ও ইউপিএল প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ।  

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক