নাগরিক কমিটি : একটি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ

সংগৃহীত ছবি

মতামত

নাগরিক কমিটি : একটি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ

জিয়া হাসান

 


বাংলাদেশে ক্ষমতা কাঠামোতে ফুড চেইনের টপ লেয়ারে রাজনীতিবিদরা মনে করা হইলেও, সেইটা ঠিক নয়, এই ফুড চেইনের টপ লেয়ার আছে পুলিশের টরচার চেম্বার, প্রশাসনের ঠেকতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের মামলা জট।  
এই সিস্টেমটার সব চেয়ে পারভারস রুপটা শেখ হাসিনার নির্মাণ করে গ্যাছেন।  
শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে একটা ছোট্ট গ্রুপকে এই তিনটি স্তরের বাহিরে একটা ফ্যাসিস্ট কাঠামো তৈরি করে, বাংলাদেশকে লুট করেছেন বটে কিন্তু জনগণের নিত্যদিনের সংগ্রামে এই টর্চার চেম্বার, ঠেকতন্ত্র ও মামলা জট সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।  
টেকনিকালি, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের প্রধান একটা কাজ ছিল, তাঁদের এক্সেস ব্যবহার করে জনগণের একটা অংশকে এইটা তিন টা সিস্টেমের সাথে ইনফরমালি নেগোসিয়েট করিয়ে দেওয়া।

 
থানায় যদি কেউ আটকায় তবে, ওয়ার্ড কমিশনার তাকে ফোন দিয়ে ছুটায় দিয়েছে।  
বৃদ্ধ ভাতা কেউ না পেলে সেইটা এমপিকে ফোন করে স্যাটেল করতে হয়েছে।  
কোর্টের মামলা জট এড়াতে রাজনীতিবিদেরা ইনফরমালি ডিস্পিউট স্যাটেল করে দিয়েছে।  
আজ ছাত্র জনতার আন্দলনে আওয়ামি ফ্যাসিজমের পতনে এই তিনটা সিস্টেম একটু সহনশীল জায়গায় নেমে আসবে বটে, কিন্তু, এনড অফ দা ডে, যদি মৌলিক ভাবে সংস্কার না করা হয় তবে,এই তিনটা সিস্টেমের সাথে নেগোসিয়েট করার জন্যে রাজনীতিবিদদের রোলটা রয়েই যাবে।
 
আমার পয়েন্ট হচ্ছে। এই তিন টা জিনিষের বৈপ্লবিক সংস্কার না করে, আওয়ামি লীগ বিএনপি ও জামাতের বিপরীতে যে কোন তৃতীয় পক্ষের সফল হওয়া দুষ্কর।  
আমার ভয় হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন কার্যক্রমে আমার মনে হয় নাই, তারা এই তিন টার মুল ইস্যু গুলোর বিপ্লবিক সংস্কার করতে সক্ষম।  
তারা কিছুটা সার্ভিস ডেলিভারি ষ্ট্যাণ্ডার্ড বৃদ্ধি করবেন বটে, কিন্তু, এখন পর্যন্ত যা যা সিগন্যাল পেয়েছি তাতে আমার কাছে এইটা স্পস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর পিরামিডে এই তিনটা সিস্টেম সবার উপরেই থাকছে।  
এই অবস্থায়, আমি শহুরে মধ্যবিত্তের থেকে উঠে আসা দল নাগরিক কমিটিকে সতর্ক ভাবে স্বাগত জানাই, এই বলে যে, আওয়ামি লীগ বিএনপির বিকল্প হইতে হলে, সবার আগে এই তিনটা লেয়ারে ফর্মাল ইনফরমাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, তাঁদের সাথে নেগোসিয়েশানের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই তারা জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন।  
আর যদি বলেন যে- না, আওয়ামি লীগ বিএনপির প্রথাগত রাজনীতি আমি করবো না, তবে, তবে, তাঁদের সবার আগে প্রশাসনের ঠেকতন্ত্র, পুলিশের টর্চার চেম্বার ও বিচার বিভাগের মামলা জটের র্যাডিকাল সংস্কার করতে হবে, তার আগে বাংলাদেশের রাজনীতির মৌলিক কোন পরিবর্তন হবেনা।  
এইটা এখন তাঁদের সুযোগ কারন, তারা ক্ষমতাতেও আছেন বিপ্লবেও আছেন। বাংলাদেশের মানুষের বিপ্লবি সংস্কারের আকাংখা তীব্র। ফলে যদি তারা এই তিনটা সিস্টেমে সংস্কার আনতে পারেন তবে, তাঁদের পলিটিকাল প্রজেক্ট ও সফল হতে পারবে এবং বাংলাদেশের মানুষ একটা সুষ্ঠু রাজনীতি ও সবল গণতন্ত্র পাবে।  
যদি সেইটা না করা যায় তবে, শহুরে মধ্যবিত্তের আওয়ামি বিএনপি বলয়ের বাহিরে রাজনীতির স্বপ্ন একটা পাইপ ড্রিম রয়ে যাবে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার।  


news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক