দাঁত রে, আমার হয়ে তুই আমার জিভকে কামড়ে দিলি

আফজাল হোসেন

দাঁত রে, আমার হয়ে তুই আমার জিভকে কামড়ে দিলি

আফজাল হোসেন

সকালে নাস্তা করতে গিয়ে হঠাৎ জিভে কামড় খেয়েছি। উফ্ তিরিশ সেকেন্ড কি যে কষ্টে কেটেছে! ভাগ্য ভালো এমনটা হলে খুব বেশীক্ষণ এই ভয়ানক বেদনা ভোগ করতে হয়না। ভাগ্য আরও ভালো যে- ঘন ঘন জিভে কামড় খেতে হয়না আমাদের। যদি হতো, জীবন বেরিয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট কিভাবে সামাল দিতে পারতাম!
কামড় খাওয়া মাত্রই দাঁতের উপর রাগ হয়েছে খুব- দাঁত রে, আমার হয়ে তুই আমার জিভকে কামড়ে দিলি!
বেদনা চলে যাবার পর অস্বস্তি অনেকক্ষণ ধরে থাকে।

অনুভব করতে পারি জিহ্বা, জিভ অনেকখানি ফুলে গেছে। ফুলে যে গেছে তা কিন্তু বুঝিয়ে দিচ্ছে দাঁতই- যে দাঁত একটু আগে তাকে কামড়ে দিয়েছে। কাছের যে, তার সাথে এমন শত্রুতামি একবার করলে মানুষ মানুষের মুখ দেখা বন্ধ করে দেবে। দাঁত আর জিভের মধ্যে সম্পর্ক তেমন নয়।
তারা মালিকদের মতো প্রতিশোধপরায়ন নয়।
কাছাকাছি ভালো ভাবে থাকবার জন্য পরষ্পরের প্রতি সমীহ খুব দরকারি। দাঁত কামড়ে দিয়েছে- তার মানে সে ধরে নেয়না, আমি শক্ত, জিহ্বা নরম সে আমার কি করতে পারবে! নরমদেরও শক্তি সামর্থ আছে, থাকে। দাঁতে ব্যথা হলে জিহ্বাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেতে হয়।
আমাদের দেখে যদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্বভাব বদলে ফেলতো- মানুষের ভয়ঙ্কর বিপদ ছিল। কোনও মানুষই সে কথা ভেবে দেখেনা। এই যে জিভে কামড় খেলাম- কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কষ্ট পাওয়াতে মনে হয়েছে, আমার জিভ আছে। বুঝতে পেরেছি তা খুবই দরকারি। সে না থাকলে খাদ্যের সুখ পেট বা মন কেউই পেতোনা। শুকিয়ে মরতাম সকলে।
জিহ্বা আমাদের আছে- মনে রাখিনা। তাকে সন্মানও করিনা। সবাইকে সে খাওয়ায়, বলায়
অথচ কি সব আবোল তাবোল কাজে ব্যাবহার করা হয় তাকে। যদি ভালো কথা বলি, সে খুশীবোধ করে, সন্মানিত হয়। আমাদের অন্যকে নিয়ে বাজে কথা বলতে ভালো লাগে। কারো প্রশংসা করা আনন্দের মনে হয়না। গালি দেই, অসন্মান করি এবং এসব অসুস্থ কম্ম করে সন্মানও পাওয়া হয়। জিহ্বা হয়তো অতিষ্ঠ হয়ে ভাবে, এর চেয়ে পশু প্রানির জিভ হওয়া ভালো ছিল।
আজ দাঁতের কান্ডে জিভের গুরুত্ব, সন্মান নিয়ে ভাবতে হয়েছে। মনে হয়েছে এই কামড়ের দরকার ছিল। মাথা ব্যথা হয় বলে মাথার গুরুত্ব বুঝতে পারি। চোখ জ্বালা করলে, নাক বন্ধ হলে, কানে ব্যথা হলেই হাড়ে হাড়ে টের পাই- সবই অতি জরুরী এবং সব ঠিকঠাক থাকা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এদের মধ্যে কেউ ভালো নেই জানান দিলে ধরে নেই না- নিজের ছিল, পর হয়ে গেছে।
কাল রাতে টেলিভিশনের পর্দায় আন্দোলন চিত্র দেখেছি। নিশ্চয়ই এর পক্ষে এবং বিপক্ষে বলার মানুষ আছে। পক্ষ বিপক্ষ যদি না থাকে কিভাবে বুঝবো, দেশের প্রাণ আছে, মানুষের অনুভব আছে। আমাদের পুরো যৌবনকালজুড়ে ছিল বিদ্রোহ, বিক্ষোভ, শ্লোগান, মিছিল- মনে হতো মানুষ শুধু মানুষ নয়, আগুনও।
গতকাল মনে হয়েছে, মানুষ বেঁচে আছে। এখনও আগুন আছে মানুষের মধ্যে। মানুষের মধ্যে আগুন থাকলে দেশ, সমাজ কি পায়- সবার দেখা।  
জিহ্বায় কামড় খেয়ে আর আন্দোলনচিত্র দেখে মনে হয়েছে- দুটো ঘটনাই নাড়া দেয়ার জন্য। ব্যথা পাওয়া হয়েছে বলেই জিভ, দাঁত, নাক, কান, চোখ- এসব নিয়ে বিস্তর ভাবাভাবি হলো। দাবী না উঠলে মানুষ যে ভালো নেই, ভালো চায়, ভিন্নমত আছে মানুষের- কিভাবে জানান দেয়া বা জানা যেতো?
লেখক: অভিনেতা ও নির্মাতা
news24bd.tv/ডিডি