মানুষের জীবনধারণের জন্য আল্লাহ তা’আলা অনেক উপায় সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে মুসলিমদের জন্য কিছু জিনিস হালাল করেছেন আর কিছু করেছেন হারাম। অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা জিনিস হালাল উপায়ে উপার্জন করলে আল্লাহ খুশি হন। পক্ষান্তরে হারাম জিনিস উপার্জন করলে কিংবা হালাল জিনিস হারাম উপায়ে উপার্জন করলে আল্লাহ নারাজ হন।
ইসলামে উপার্জনের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা হলো হালাল পথে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল খাবার খেয়েছে, সুন্নাহ মোতাবেক আমল করেছে ও মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সে জান্নাতে যাবে। ’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ২৫২০)।
ইবাদত ও দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত হালাল উপার্জন।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মানবজাতি। পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তা থেকে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্যে শত্রু। ’ (সুরা বাকারা : ১৬৮)।
মুমিনের উপার্জন হতে হবে বৈধ পন্থায়। তাহলে তা থেকে ক্রয়কৃত খাদ্য কলবের জন্য উত্তম খাদ্যে পরিণত হবে, আমলের স্পৃহা ও স্বাদ অনুভব হবে। অন্যথায় এগুলোতে বাহ্যিক কিছু ফায়দা দেখা দিলেও ক্ষতির সম্ভাবনাই থাকবে বেশি।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদাত করে থাকো। ’ (সুরা বাকারা : ১৭২)।
আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (হালাল উপার্জনের জন্য) ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ (সুরা জুমআ : ১০)।
নামাজের পরই আল্লাহতায়ালা হালাল জীবিকার সন্ধানে বের হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অসৎ ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের দান-সদকাও কবুল হয় না। হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের অর্থ-সম্পদের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য প্রত্যাশা করা যায় না।
হারাম উপার্জনকারীর কোনো ইবাদতই মহান আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। এ উপার্জন ইসলামের দৃষ্টিতে অপবিত্র বস্তু। আর ইবাদত, দোয়া, দান-সদকা পবিত্র জিনিস, যা কেবল পবিত্র বস্তুর মাধ্যমেই সম্পন্ন করা আবশ্যক।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, "এমন কখনো হবে না যে কোনো বান্দা হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করবে, এরপর তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে এবং তাতে বরকত দান করা হবে; সে তা থেকে সদকা করবে এবং তা কবুল করা হবে। বরং ওই ব্যক্তি সেই সম্পদ মৃত্যুর পর রেখে গেলেও তা তাকে আরও বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা গুনাহ দিয়ে অন্য গুনাহ নির্মূল করেন না। তবে নেক আমল দিয়ে গুনাহ নির্মূল করেন। নিশ্চয়ই অপবিত্র বস্তু অপর অপবিত্র বস্তুর অপবিত্রতা দূর করতে পারে না। (মুসনাদে আহমদ: ৩৬৭২; মুসনাদে বাজ্জার: ২০২৬)"
বর্তমান সময়ে সুদ-ঘুষের ব্যাপকতায় হালাল উপার্জনেও হারাম মিশে যাচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষায় পুরোপুরি জ্ঞাত না হওয়ার কারণে। এজন্য প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার। ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপকতার জন্য সবার উদ্যোগী হতে হবে। যেন এই নশ্বর জগতে প্রভু নির্দেশিত পন্থায় ইবাদত করে পরকালের পাথেয় অর্জন করতে পারি।