পিএসসিকেও 'বোকা' বানালেন আবেদ আলী

পিএসসিকেও 'বোকা' বানালেন আবেদ আলী

অনলাইন ডেস্ক

প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে সারাদেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দবিন্দুতে সৈয়দ আবেদ আলী। একজন সাধারণ ড্রাইভার থেকে সৈয়দ আবেদ আলী কীভাবে কোটিপতি এবং নিজ এলাকায় কীভাবে রাজনৈতিক নেতায় রূপান্তরিত হলেন তা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।

চাকরির খোঁজে রাজধানীতে এসে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরিচালকের গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পান পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়ি চালানোর। তবে এক প্রকার যেন পিএসসি-কে বোকা বানিয়ে হাতিয়েছেন চাকরি।

সৈয়দ আবেদ আলী পিএসসিতে চাকরি নিয়েছিলেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে নন-ক্যাডারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পিএসসির চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

সৈয়দ আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার হলেও পিএসসিতে চাকরি নেওয়ার সময় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সিরাজগঞ্জ উল্লেখ করেছিলেন। এ ব্যাপারে পিএসসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি সৈয়দ আবেদ আলীর স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়। সৈয়দ আবেদ আলী ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় তিনি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শ্রীফলতলা গ্রামে। বাবা : সৈয়দ আবদুর রহমান। এই ঠিকানা উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয়ের গাড়িচালক পদের সরকারী চাকরিতে যোগ দেন।  

২০১৪ সালের ২২ এপ্রিলে নন-ক্যাডার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়য়ের ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদে লিখিত পরীক্ষায় লিখিত উত্তরপত্র সরবরাহ করার অভিযোগে সৈয়দ আবেদ আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী তার স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়। ডাক বিভাগ সৈয়দ আবেদ আলীর স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি গ্রহণের জন্য কাউকে না পেয়ে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীটি পিএসসিতে ফেরত পাঠায়। একইভাবে সাময়িক বরখাস্তের আদেশটিও ফেরত আসে।

অভিযুক্ত কর্মচারীর স্থায়ী ঠিকানাটির সঠিকতা যাঁচাই করে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বরে সিরাজগঞ্জ  জেলা প্রশাসক পিএসসিকে জানান, তাঁর স্থায়ী ঠিকানাটি সঠিক নয় এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকায় সৈয়দ আবেদ আলী বা তাঁর পূর্ব পুরুষদের কেউ তালিকাভুক্ত নন। অর্থাৎ সৈয়দ আবেদ আলী ভুয়া স্থায়ী ঠিকানায় চাকরি নিয়েছেন।

সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, আবদুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। তাঁর এক ভাই কৃষিকাজ করেন। আরেক ভাই অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এলাকার মানুষের কাছে আবেদ আলী পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে।

আবেদ আলীর সম্পদের প্রাথমিক তথ্য মারফত জানা যায়, যে পরিমাণ টাকা তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন, তাতে হয়ে গেছেন গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক। গ্রামে তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। পাশে নিজের নামে তৈরি করেছেন মসজিদ। রয়েছে ডেইরি ফার্ম ও বাগানবাড়ি। রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে তৈরি করেছেন মার্কেট। নিজ এলাকায় শতবিঘার ওপরে জমি কেনার পাশাপাশি কুয়াকাটায় তৈরি করেছেন থ্রি স্টার হোটেল সান মেরিনো। ঢাকার মিরপুর ও উত্তরায় রয়েছে দুটি বহুতল বাড়ি। তথ্য বলছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার রয়েছে অন্তত সাতটি ফ্ল্যাট এবং তিনটি প্লট।

গ্রেপ্তারে পর গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আবেদ আলীর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রশ্ন ফাঁসে কত টাকা ইনকাম করেছেন? জবাবে আবেদ আলী বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসে যত টাকা কামাই করেছি, সব খরচ করেছি আল্লাহর রাস্তায়। ’

news24bd.tv/TR