একটা ছবি যে স্মৃতির কতটা শক্তিশালী স্তম্ভ, তা এই ছবি কুড়িয়ে পেয়ে বার বার মনে হচ্ছে।
স্মৃতি অতীতে টানে, একথা বলাই বাহুল্য।
হ্যাঁ, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কেটেছে যেখানে, এবং যে স্থানে তখন মনের শান্তি নিয়ে কাজ করেছি। চাকুরীজীবনের প্রায় অনেকগুলো বছর কাটিয়েছি।
সন্ধ্যা হলে এমন রাতেই ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শোনা যেত অবিরাম।
যখন জোনাকপোকা ধরে কারো সামনে আলো ধরেছি, মুঠোর ভেতর সেই আলো দেখে বাচ্চাগুলো নেচে উঠতো। সেইসাথে আমার মন।
মাঠের একপাশে ভাবী/আপাদের আড্ডা তথা গসিপ, দুর্বাঘাসে ঢাকা বাকি পুরোটা জুড়ে ছিল আমি ও জোনাকপোকা এবং আমাদের বিচরণ। অথবা ঝিঁঝিঁপোকা/ ব্যাঙের ডাক। রাতের ঘড়ির কাঁটা দশটায় না গড়ালে না বাচ্চারা আমাকে, না আমি তাদেরকে ছেড়ে আসতে পেরেছি। কতদিন গেছে আমাদের এভাবে, আহা কতদিন। কত যে দীর্ঘ আমাদের সেইসব দিনের গল্প। শান্তি, সুখের দিনগুলো....
পুকুরঘাট, পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়ানো জোছনা রাতে।
মন কেমন হয়ে উঠছে। চোখের সামনে কত কী ভাসছে। স্মৃতির ঘোরে ডুবে যাচ্ছি। এ ঘোর ভাসিয়ে নিবে, রাত পোহাবে। তাই থামছি।
শেষটুকু বলি ছবি নিয়ে- ওইযে বলি এক ঊর্ধ্বতন। তিনি ছিলেন তখন সব মানুষের। কোনো দলের নয়। প্রশাসনের নির্বাহী। সকলের ভরসার স্থল। মানুষের ভালোবাসা কাজের গতি বাড়ায়। তাঁর বেলায়ও তেমনটাই সত্যি ছিল। তিনি উপজেলায় একটি কিন্ডারগার্টেন গড়ে তুললেন। না, শুধু ইট-সিমেন্ট আর জায়গার বন্দোবস্ত দিয়েই নয়, সহধর্মিণীকে সম্পৃক্ত করলেন সার্বিক সাফল্যের উদ্দেশ্যে। নিজ সন্তানের ন্যায় লালন-পালন করলেন যতদিন সেখানে কর্তব্যরত ছিলেন। নাম ছিল উদ্দেশ্যের মতো সুন্দর- "শিশুমেলা"
এক পহেলা ফাল্গুন অথবা বৈশাখ অনুষ্ঠানে তারা-তারা গান গেয়ে অনুষ্ঠান সুশোভিত করছিলেন। তাঁরা শিল্পী সকল। সম্ভবত সেটাই ছিল স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম অনুষ্ঠান। ২০০৩/২০০৪ সালের কথা।
স্টেজে হারমোনিয়াম বাজানো মেয়েটি আমার, মাইক্রোফোন হাতে রাইসা, আমার প্রিয় স্যার এর মেয়ে, আর মুখ দেখে যতটা মনে পড়ছে ছেলেদের একজনের নাম নুহাশ, ওর বাবার অফিসের নামও মনে আছে। দু:খ লাগছে বাকিদের মনে করতে পারছিনা কে-কারা।
লেখা ছাড়বো ভেবে ছবিটা আরও একবার দেখে নিলাম। এবার খুব হাসছি আমার কন্যার মুখের উপর চোখ রেখে।
ওইযে আমি বলি না- তার ক্লাস টু সময় থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত গানের শিক্ষকের কাছে নিয়মিত পাঠিয়েছি সে গান শিখবে, গাইবে বলে। আর আমি হবো মুগ্ধ শ্রোতা। আসলে তেমনটা কখনো হয় নাই। সে ক্লাস নিয়মিত করলেও গান গাইতে বললে মুখ অমন করে মনের আকাশ কালোমেঘে ছেয়ে দিত তার। আমার তো বটেই। তারপর, একদিন ছাড়িয়ে নিলাম সেখান থেকে। যা তার ভালোই লাগেনা, বৃথা চেষ্টা না-ই করি ভেবে।
এবং সাথে আশা ছেড়েছি আমিও। গান আর শোনা হয়নি তার সামনে বসে ঘরে কিংবা বাহিরে মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে। তার মাঝে নিজের গান গাইতে পারার স্বপ্ন পূরণ দেখব বলে যে ইচ্ছে সে আর পূর্ণ হয়নি।
যাক, আজ এখানেই ইতি টানি।
একদিন আসলে অনেক অপূর্ণতার শোক নিয়েই অনেককিছু থেকে সরে আসতে হয়৷ একটা প্রিয় জায়গাও ছেড়ে আসতে হয় অপ্রিয় কিছু মানুষের জন্য ।
লেখক : সরকারি কর্মকর্তা
news24bd.tv/ডিডি