বিলিয়নিয়ার হতে যাচ্ছেন সুন্দর পিচাই

গুগলের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুন্দর পিচাই।

বিলিয়নিয়ার হতে যাচ্ছেন সুন্দর পিচাই

অনলাইন ডেস্ক

শিগগিরই বিলিয়নিয়ার হচ্ছেন অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড বা গুগলের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুন্দর পিচাই। তিনিই প্রথম কোনো ব্যক্তি যিনি গুগলের প্রতিষ্ঠাতা না হয়েও এই বিরল মাইলফলক অর্জনের পথে রয়েছেন।

বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী পিচাই ২০১৫ সালে গুগলের সিইও হওয়ার পর থেকে কোম্পানি স্টক বা শেয়ার ৪০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একই সময়ে এসঅ্যান্ডপি ও নাসদাককেও ছাড়িয়ে গেছে।

কোম্পানির ক্লাউড কম্পিউটিং ইউনিটে এআই-চালিত প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানির প্রথম-ত্রৈমাসিক আয় প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গত সপ্তাহে নতুন রেকর্ডে গড়েছে। এটি প্রথমবারের মতো লভ্যাংশও চালু করেছে।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, চাঙ্গা স্টক মূল্যের পাশাপাশি গুগলের এই রমরমা অবস্থাই এর প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইকে বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভোগী নির্বাহীদের অন্যতম করে তুলেছে। যার জোরে তার সম্পদ প্রায় ১ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্পদিনের মধ্যে বিলিয়নিয়ার মর্যাদা পেয়ে যাবেন পিচাই।

ভারতের চেন্নাইয়ে জন্ম নেয়া সুন্দর পিচাইয়ের মূল নাম পিচাই সুন্দরারাজন। তিনি একটি দুই কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে বড় হয়েছেন যেখানে তিনি ও তার ছোট ভাই বসার ঘরের মেঝেতে ঘুমাতেন। শৈশবের বেশিরভাগ সময় পিচাইদের কোনো টেলিভিশন বা গাড়ি ছিল না। যা তিনি সাক্ষাত্কারে বলেছেন।
পিচাইয়ের বাবা রঘুনাথ তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন, মা লক্ষ্মী ছিলেন স্টেনোগ্রাফার। উচ্চবিত্ত পরিবার ছিল না তাদের। ছোটবেলায় দুই ঘরের অ্যাপার্টমেন্টের বসার ঘরে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমাতেন সুন্দর। ১২ বছর বয়সে তাদের পরিবারে প্রথমেএকটা রোটারি টেলিফোন আসে। যেটা তাকে প্রযুক্তির সুবিধার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বলে তিনি জানান।

শৈশবে সংখ্যা মনে রাখায় বিশেষ দক্ষ ছিলেন পিচাই। ব্যাপারটি তার বাবা-মা বুঝতে পারেন, যখন দেখলেন তাদের রোটারি ফোনে ডায়াল করার সব নম্বর পিচাইয়ের মুখস্থ। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিচাই এখনও মাঝেমধ্যে মিটিংয়ে তার সেই দক্ষতার প্রমাণ দেন।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) খড়গপুর থেকে মেটালারজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন তিনি। এরপর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন পিচাই। প্রথম প্রোগ্রাম হিসেবে তৈরি করেন দাবা খেলার সফটওয়্যার। ভারতের দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে পিচাই বলেছিলেন, প্রযুক্তি আমার সব সময়ের পছন্দের বিষয় ছিল। আর সিলিকন ভ্যালি ছিল আমার স্বপ্ন, আমি এ নিয়ে লেখা পড়তাম, চাচার কাছ থেকে শুনতাম।

১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান সুন্দর পিচাই। স্ট্যানফোর্ড থেকে এমএস শেষে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার হোয়ার্টন স্কুলে এমবিএ করেন। গুগলে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালস এবং ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করেছেন।

গুগলের মূল কার্যালয় গুগলপ্লেক্সে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। এপ্রিল ফুলের সেই দিনেই জি–মেইল চালু করে গুগল। পিচাইসহ সবাই ভেবেছিলেন বিনা মূল্যের ই-মেইল সেবাটি নিশ্চয় মজা করার জন্য করা।

গুগলের সার্চ টুলবার দিয়ে শুরু হয় পিচাইয়ের কাজ। তবে ২০০৬ সালে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মাইক্রোসফট। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজে ওয়েব ব্রাউজার ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’-এর ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ‘বিং’ ঠিক করে দেয় মাইক্রোসফট।

পিচাই সে সময় কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিক্রি করা কম্পিউটারে গুগলের সার্চ টুলবার যুক্ত করার ব্যাপারে বোঝাতে সক্ষম হন। মাইক্রোসফটের সে উদ্যোগে যে ক্ষতির মুখে পড়েছিল গুগল, পিচাইয়ের কাজে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের ফাঁড়াটি পিচাইয়ের জীবনে আশীর্বাদ হয়েই আসে। সে সময় গুগলের নিজস্ব ওয়েব ব্রাউজার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনকে রাজি করাতে সক্ষম হন তিনি। ফলাফল? ক্রোম এখন বিশ্বের জনপ্রিয়তম ব্রাউজার।

নেতা হিসেবে পিচাইকে সবাই পছন্দ করতেন। অনন্য হওয়ার চেয়ে বরং ভালো ফলাফলে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ক্রমেই তার কাঁধে দায়িত্ব বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালে অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের নেতৃত্বও দেওয়া শুরু করেন তিনি।

সুন্দর পিচাইয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হলো ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম দামের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে ছেড়ে ৫০০ কোটি নতুন মানুষকে অনলাইনে যুক্ত করতে চেয়েছেন তিনি।

অ্যান্ড্রয়েড যেন গুগলের সেবাগুলোর সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন পিচাই। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে অ্যান্ড্রয়েড সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবসা হিসেবে পরিচালিত হতো।

গুগলে পিচাইয়ের উত্থানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো, ২০১৪ সালে ৩২০ কোটি ডলারে নেস্ট অধিগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। কম খরচের ক্রোমবুক ল্যাপটপ কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ‘ক্রোম ওএস’-এর পেছনেও আছেন পিচাই।

বেশ কয়েকবার টুইটারের উচ্চপদে কাজের জন্য ডাক পেলেও গুগল ছেড়ে যাননি তিনি। পিচাই প্রায়ই ল্যারি পেজের ‘অনুবাদকের’ ভূমিকা নিতেন। অর্থাৎ পেজের লক্ষ্য নিজে বুঝে বাকি কর্মীদের কাছে তা পৌঁছে দিতেন। ল্যারি পেজ লিখেছিলেন, ‘এ কাজের জন্য তিনিই (পিচাই) সেরা। ’
সেই দক্ষতা এবং ক্রোম, অ্যাপ ও অ্যান্ড্রয়েডে সাফল্যের ফলে ২০১৪ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদোন্নতি পান তিনি। সার্চ, ম্যাপস, গুগল প্লাস, বিজ্ঞাপন, অবকাঠামোসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব পণ্যের দায়িত্ব আসে পিচাইয়ের কাঁধে। পেজের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’-এর ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।

পিচাইয়ের পদোন্নতির ঘোষণা দিয়ে কর্মীদের কাছে পাঠানো বার্তায় পেজ লিখেছিলেন, 
ভবিষ্যৎ দেখতে পারা এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্মীদের কাজে লাগানোয় পিচাইয়ের অসাধারণ দক্ষতা। পণ্যের ব্যাপারে আমাদের দেখার চোখ প্রায় একই। এ কাজের জন্য তিনিই সেরা।

২০১৫ সালে গুগলের করপোরেট কাঠামোয় বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়। প্রতিষ্ঠানের মূল বিভাগগুলোকে আলাদা প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো গুগল, যার অধীনে আছে সার্চ, ম্যাপস, বিজ্ঞাপন, ইউটিউবসহ মূল সেবগুলো।

আর ‘অ্যালফাবেট’ নামে মূল প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে সব কটি বিভাগ সেটির অধীনে আনা হয়। গুগলের মূল পণ্যগুলোর দায়িত্বে ছিলেন পিচাই। স্বাভাবিক কারণেই তাকে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) করা হয়।

news24bd.tv/ab