রাখাইন দখলে নিচ্ছে আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গারা কি আশ্রয় পাবে?

রোহিঙ্গাদের ঢল

রাখাইন দখলে নিচ্ছে আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গারা কি আশ্রয় পাবে?

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পুরো সীমান্ত দখলে নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। সংগঠনটির মুখপাত্র ইউ খাইন তু খা বলেছেন, এ রাজ্যের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন তারা। রাজ্য দখলে নেওয়ার আগ পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন। এখন প্রশ্ন হলো, যদি আরাকান আর্মি রাখাইনের দখল নেয়, তবে তারা কি রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে?  

আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইন তু খা নিউজ টোয়েন্টিফোরকে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাংলাদেশ সীমান্তে লাগায়ো ট্রাইজংশন (তিনমুখ) এলাকা থেকে শুরু করে মংডুর কাছ পর্যন্ত পুরোপুরি এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।

আমরা আমাদের অস্তিত্বের জন্য ও রাখাইনের জন্য লড়াই করছি। আমরা এখানে স্বাধীনতা, সমতা, ন্যায়বিচার ও শান্তি চাই। আরাকানের সব নাগরিকের জন্য কাজ করছি আমরা। ’ 

অর্থাৎ তিনি আরাকানের নাগরিকদের কথা বলেছেন।

ফলে এটা স্পষ্ট যে, যারা আরাকানের নাগরিক তাদের জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন। যেসব রোহিঙ্গার সেখানকার নাগরিকত্ব আছে কেবল তারাই সংগঠনটির সহযোগিতা পাবেন। যাদের নাগরিকত্ব নেই তাদের ব্যাপারে স্পষ্ট করে তারা কিছু বলেননি।  

তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা ইয়াবা, আইসের মতো মাদকের দেদার পাচার। এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘মাদক পাচার রোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স। আমরা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নাফ নদীসহ বহু এলাকা দিয়ে মাদক পাচার রোধ করেছি। তবে পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা দরকার। ’  

আরাকান আর্মি যেমন সুসংগঠিতভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, রোহিঙ্গাদের সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যায়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, নবী গ্রুপ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের অন্তত ১১টি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। আলোচিত অন্য গোষ্ঠীগুলো মধ্যে রয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), মুন্না গ্রুপ, আইয়ুব মাস্টার গ্রুপ ও আল-ইয়াকিন গ্রুপ। তারা মুখে রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা বললেও কার্যত সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য, গরুসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানে লিপ্ত। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরাও পড়ে।  

জানা যায়, আরসাও একসময় আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার দাবি করেছিল। তবে আরাকান আর্মি সেই দাবির সত্যতা স্বীকার করেনি। আরাকান আর্মি সে দেশের বৌদ্ধসম্প্রদায়কে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বললেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কিছু বলেনি। এর কারণ জানতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আরাকান আর্মিকে ই-মেইল করা হলেও তারা জবাব দেয়নি। তবে আরাকান আর্মির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত তিনটি জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন ছাড়া আর কাউকে তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আরাকান আর্মি ছাড়া অন্য দুটি হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।

বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো ২০১৭ সালের পর রাখাইনে নিজেদের অধিকার আদায়ে কিছু করেছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। সে কারণেই আরাকান আর্মি রাখাইনে সফলতার ভাগ তাদের দিতে চাইছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘রাখাইনে আরাকানিয়ানদের চেয়ে রোহিঙ্গারা বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার; কিন্তু তারা দাবি আদায়ের জন্য কিছু করতে পারেনি। এর কারণ হলো, তাদের মধ্যে ঐক্য ও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোক নেই। তাদের সশস্ত্র গ্রুপগুলো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। সে সুযোগে আরাকান আর্মি আন্তর্জাতিক মহলেও একটি জায়গা করে নিয়েছে। ’

দলাদলির বিষয়টি নিয়ে এখন রোহিঙ্গাদের মধ্যে সমালোচনা হচ্ছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা রাখাইনে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাচ্ছি; কিন্তু তা হচ্ছে না। আমাদের হয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো কেবল কথা বলতে পারে, এ ছাড়া আর কোনো গ্রুপ এ মুহূর্তে সক্রিয় নেই। ’

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শক্ত অবস্থান থাকলে আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকার উভয়েই তাদের সঙ্গে বসতে চাইত; সেই অবস্থান তাদের নেই। তারপরও ইদানিং জান্তা সরকার রোহিঙ্গা তরুণদের জোর করে সামরিক বাহিনীতে ঢোকাচ্ছে, এটাও এক ধরনের স্বীকৃতি। যদিও এতে রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে, তবে জান্তার এ সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কারণ রোহিঙ্গারা জান্তা বাহিনী থেকে বেরিয়ে আরাকান আর্মিতে গেলে তাদের সামাল দেওয়া আরও কঠিন হবে। ’ 

news24bd.tv/আইএএম