‘শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে ব্যাংকে চাপ কমাতে হবে’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অতিথিরা

‘শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে ব্যাংকে চাপ কমাতে হবে’

অনলাইন ডেস্ক

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে আরও উদ্যোগী হতে হবে। শেয়ারবাজারে যেসব সমস্যা আছে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া দরকার। কারণ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মূলধন জোগান হয় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে। এখন তারা এই বাজার থেকে তেমন টাকা নেয় না।

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমাতে হবে।  

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।  

দেশের বেসরকারি খাত শেয়ারবাজার থেকে টাকা নেয় না কেন? বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমন প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই বাজার নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। সব দায় ব্যাংক খাতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না।

অর্থাৎ ব্যাংক খাতের ওপর সবার নির্ভরতা কমাতে হবে। সরকার ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে অর্থ নিলেও ব্যবসায়ীদের শেয়ারবাজারে বড় সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের শেয়ারবাজারে ফিরে আসতে হবে। ’

অনুষ্ঠানে মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য এখন নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বাজেটে সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবে কিছু পাই, আবার কিছুই পাই না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে আছে তাঁদের সহযোগিতা দরকার। এখন ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়া অবারিত নয়। সহজে ঋণ পেতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হয়। ’  

মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, ‘এখন শতভাগের বেশি ডিপোজিট দিয়ে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। ওদিকে ডলার ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় ব্যাংক থেকে নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছে না। একদিকে অনৈতিক লেনদেনের চাপ আছে, অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ও ঋণের সুদসহ অন্যান্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ৪০ শতাংশ মুনাফা না করলে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। আগামী বাজেটে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চিফ অ্যাডভাইজর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘জিডিপির ২০ শতাংশ আদর্শ বাজেট, আমরা ১৭ শতাংশের বেশি কখনোই করতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারছি না। যেখানে ৯০ লাখের কর দেওয়ার কথা সেখানে ৯ লাখের পাচ্ছি। রাজস্ব আদায় না বাড়াতে পারলে আদর্শ বাজেট প্রণয়ন সম্ভব হবে না। ’  

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আগামী দিনে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে জোর দিতে হবে। রাজস্ব না বাড়তে চাইলে বাজেটের আকার বাড়ানো যাবে না। এখন সামষ্টিক অর্থনীতিতে তিনটি মূল সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমত মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। মুদ্রা বিনিময় বাজার স্থিতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি বন্ড নিয়ে কাজ করা উচিত। ’

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে অটোমেশনে যেতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগে বিভক্ত করতে হবে। এক ভাগ নীতি নির্ধারণ করবে, অন্য ভাগ রাজস্ব আদায় করবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও একটি জাতীয় রাজস্ব প্ল্যাটফরম চান। আমরা এনবিআরের কাছে যেতে চাই না, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কর দিতে চাই। ’   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রাহমান বলেন, ‘জাতিসংঘ স্বীকৃত জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকা উচিত। আমাদের জাতীয় বাজেটে তা ২ শতাংশের কম। শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও দক্ষতা বাড়াতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বড় পরিকল্পনা নিতে হবে। ’

news24bd.tv/আইএএম