বগুড়ার সোনাতলায় ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও চারটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও ছয়টি মুদি দোকান, আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া-১ আসনটি সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ধানের শীষের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম ও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নানের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধানের শীষের প্রার্থী কাজি রফিকুলের পক্ষের নেতাকর্মীরা সোনাতলা উপজেলায় গণসংযোগ করার ঘোষণা দিলে নৌকা মার্কার সমর্থকরাও গণসংযোগের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।
মোটরসাইকেল বহর চড়পাড়া বাজারে পৌঁছালে নৌকার প্রতীকের কর্মীসমর্থকদের সঙ্গে ধানের শীষের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংর্ঘষ। উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঠা ও ইটপাটকেল দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানের শীষের নেতাকর্মীরাও যোগ দেয়। এক পর্যায়ে নৌকার কর্মী সমর্থকরা কোনঠাসা হয়ে পালিয়ে যায়।
সংঘর্ষ চলাকালে সোনাতলার চড়পাড়া বাজারে থাকা আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক অফিস, ৬টি মুদি দোকান, পাশের হুয়াকুয়া গ্রামের থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকটি বাড়িঘরের দরজা, জানালায় লাঠিসোঠা দিয়ে হামলা করে। নির্বাচন উপলক্ষে তৈরি করা নৌকা প্রতীক পুড়ে দেয়। সংঘর্ষের সময় আরো দুটি মোটারসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ১০টি মোটারসাইকেল ভাঙচুর হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছে ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ১৩ জনকে আটক করে।
সংর্ঘষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়। আহতরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ আলী কমেল (৪৫), নুপুর বেগম (৩৫), উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক জান্নাতুল ফেরদৌসি রুম্পা (৩২), সাবিনা ইয়াসমিন (২৭), জিয়া কাজী (৩৫), নেতা সুজন কুমার ঘোষ (৩৩), অমিত রায় (২৮), সজনী বেগম (৩৫), রেবেকা বেগম (৩৬), আপেল মাহমুদ (৩৫), রিপন (৩২), নিজু মিয়া (৩২), মেহেদী হাসান (২৫) আহত হয়।
এছাড়াও বিএনপির নেতাকর্মীরা সোনাতলা উপজেলার পদ্মপাড়ায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা চরপাড়া বাজার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নানের দোকান ভাঙচুর, উত্তর বয়ড়া তাহেরুল ইসলামের বাড়ি ও মোখলেছুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করে। আহদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে বগুড়া মেডিকেলে ভর্তি করে দেন।
ধানের শীষের প্রার্থী কাজি রফিকুল ইসলাম জানান, সোনাতলা থানার ওসি ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি ব্যাপারে। নৌকা মার্কার কর্মীসমর্থকরা এলাকায় যেতে দেবে না মর্মে আগে থেকেই প্রচার করে আসছিল। এ কারণে পুলিশকে জানানো হয়েছিল বিষয়টি। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিইে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা তার নেতাকর্মীদের হামলা চালিয়ে মারপিট ও মোটরসাইলে পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল করিম শ্যাম্পু দাবি করে জানান, বিএনপির মিছিলকারীরা হাতে লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেওয়ায় ভোটারসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তাদের মিছিল থেকে হামলা করায় প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। দুইটি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর এবং ১৫-২০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, অতিরিক্তি পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চড়পাড়া এলাকায় অবস্থান করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
বগুড়া-১ আসনের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান জানান, বিএনপি বহিরাগত ক্যাডার নিয়ে তার নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে পূর্ব পরিকল্পনা করে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছে না, তারা চাইছে নির্বাচন ভন্ডুল করতে।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)