যে কারণে বার বার ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পায় সেন্ট মার্টিন 

যে কারণে বার বার ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পায় সেন্ট মার্টিন 

অনলাইন ডেস্ক

উপকূল অতিক্রম করে রোববার (১৪) বিকেলেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় কক্সবাজার বা বাংলাদেশের উপকূলে এটার আঘাত ছিল সীমিত। গত কয়েকদিন ধরেই দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম ছিল। এমনকি আন্তর্জাতিক আবহাওয়ারও নানা খবরে মোখা সরাসরি মিয়ানমার উপকূলের পার্শবর্তী কক্সবাজার তথা সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানার সতর্ক সংকেত প্রচারিত হয়েছে।

কিন্তু ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’র মত ঘটনাটিই বাস্তবে রুপ পেয়েছে।

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গণমাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আলোচনাকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অংশ বিশেষ তলিয়ে যাবার শংকা প্রকাশ করেন। তাঁর শংকাটি দ্বীপবাসীকে বেশ নাড়া দিয়েছে।

দেশের বিশিষ্ট সামুদ্রিক বিজ্ঞানী, কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনষ্টিটিউট-বুরি এর মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, ‘গত একশ বছরেও সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানেনি।

দ্বীপটিতে আঘাত হানেনি একদম লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া অনেক মানুষের প্রাণহানি হবার মতও কোনো দুর্যোগ। ’

সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, ‘দ্বীপটির কাছে এসে বার বার ঘূর্ণিঝড় দিক পরিবর্তন করে থাকে। এরকম আরো অনেক তথ্য রয়েছে। তবে গেল বছর সিত্রাংয়ের সময় দ্বীপে জলোচ্ছাসের পানি উঠেছিল। দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান জনিত কারণেই ঘূর্ণিঝড়ের চোখ মূলত ধাবিত হয় সমুদ্রের হাই-প্রেশার জোনের দিকে। ’ 

তিনি জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি আসার পর মূলত ডান দিকে (দ্বীপের দক্ষিণ পাশে) পানির গভীরতা ও বিস্তৃতি বেশী থাকার কারণে গরম আবহাওয়ায় সেই দিকেই হাই প্রেশার জোন তৈরি হয়। আবার টেকনাফ এলাকাটিসহ সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি আরাকান-ইয়োমা হিল রেঞ্জের অংশ হওয়ায় সরাসরি বায়ু প্রবাহ এই দিক থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিও আরাকান-ইয়োমা অর্থাৎ ইন্দো-বার্মা হিল রেঞ্জের অংশ এবং মায়োসিন সময়ের পাথর (মায়োসিন যুগ অর্থাৎ ৫০ লক্ষ বছর আগে) অর্থাৎ বোল্ডার দিয়েই গঠিত যা সমুদ্রতলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে একটি বোল্ডার রীফ তৈরী করেছে, ফলে সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি এলে ঘূর্ণিঝড়ের মুখ সরাসরি প্রবেশে চরমভাব বাধা প্রাপ্ত হয়। ’ 

বুরির মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘উপরে বর্ণিত প্রভাবের সঙ্গে কোরিওলেস ইফেক্ট যোগ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের চোঁখ ডান দিকে বেকে যায়। ফলে মোখা ঘূর্ণিঝড়টি ডান দিকে বেকে গিয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূলে আঘাত হানে। এর আগেও দেখা গেছে, ইতোপূর্বে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের চোখ এ দ্বীপটির উপর দিয়ে অতিক্রম না করে ডান দিকে কিংবা বাম দিকে বেঁকে গিয়েছে। ফলে বার বার রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।

এদিকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাসহ দেশের অনেক লোক এক প্রকার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখার চেয়েও দ্বীপের ‘বড় অংশ তলিয়ে যাবার’ আতংকে।

দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, নানা সময়ে দ্বীপের পরিবেশ নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়েছে বটে কিন্তু দ্বীপ তলিয়ে যাবার মত ‘মন্তব্য’ তারা শুনেননি। এ কারণেই সবচেয়ে বেশি আতংকের মধ্যে সময় অতিবাহিত করেছেন দ্বীপের লোকজন।

সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশের বিষয়ে বলেন, ‘তিনি (মোস্তফা কামাল পলাশ) হয়তোবা শুধুমাত্র স্যাটেলাইট ডাটার ওপর ভিত্তি করে আনুমানিক একটি মডেল করেছেন। কিন্তু তিনি সেন্টমার্টিন এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক অনন্য বৈশিষ্ট্য যা একটি ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে সেটি বিবেচনায় আনেননি। ’