চলছে খুদে শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা। আর তাতে অংশ নিয়েছেন অভিভাবকরা! শুনতে অবাক লাগলেও এমন দৃশ্যই চোখে পড়লো টাঙ্গাইলের গোপালপুরের নারুচী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে।
পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট পরই কেন্দ্রের আশেপাশে দলে দলে ভাগ হয়ে কিছু একটা করার ঝটলা চোখে পড়ে। কৌতুহলবশত একটু এগিয়ে গেলে দেখা গেল প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখে সাদা কাগজে উত্তর লিখছেন অভিভাবকরা।
সরেজমিনে রবিবার প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) গণিত পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই কেন্দ্রে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। আর এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এসময় প্রশ্নপত্র কীভাবে বাইরে আসলো জানতে চাইলে অভিভাবকরা বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতর থেকে প্রশ্নটি মোবাইলের মাধ্যমে ছবি তুলে স্থানীয় কোচিং সেন্টারের পরিচালকরা সরবরাহ করছে।
ওই কেন্দ্রে চারটি কোচিং সেন্টারের ৪৮জন শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ৩৯৭জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই। এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে কোচিং না করানো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে। তারা বলছেন, এখানে প্রতিযোগিতা চলছে মূলত কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে। যে কোচিংয়ের শিক্ষার্থী বেশি ভালো করবে, তারা ভবিষ্যতে ছাত্র-ছাত্রী বেশি পাবে। এজন্য যেভাবেই হোক তারা তাদের পরীক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করাতে শিক্ষকদের ম্যানেজ করে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে অভিভাবকদের কাছে সরবরাহ করছে। এরপর উত্তর নিয়ে ভেতরে দিচ্ছে। কখনো নিজেরই উত্তর লিখে ভেতরে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করছে।
উত্তরপত্র লেখার সময় ব্রাইটার কোচিং সেন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ব্রাইটারের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের যে কোন সহযোগিতা করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সবাই করছে, তাই আমাদের ছেলে-মেয়ের জন্য একটু সহযোগিতা করছি।
তিনি আরো জানান, দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করেই মোবাইলে প্রশ্নপত্র তুলে বাইরে আনতে হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে নারুচী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব সাইদুজ্জামান জানান, কেন্দ্রে সুষ্ঠভাবে পরীক্ষা হচ্ছে।
কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় এই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা কষ্টের। তবে নকলের কোন সুযোগ নেই। প্রশ্নপত্র বাহিরে যাওয়ার কোন খবর জানা নেই।
প্রশ্নপত্র বাহিরে ও নকলের মহোৎসবের বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা শারমীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্টো সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এছাড়া সাংবাদিকরা কীভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছে তাও জানতে চান।