বেতারে উর্দু সম্প্রচার কেন চালু করা যায়?

ফিরোজ আহমেদ

মতামত

বেতারে উর্দু সম্প্রচার কেন চালু করা যায়?

ফিরোজ আহমেদ

এখনও না থাকলে একটা হিন্দি সম্প্রচারও চাই। আর সম্ভব হলে চাই একটা উপমহাদেশীয় এবং মায়ানমার ও আফগান-ইরান সমেত সম্মিলিত চ্যানেল।

পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাটা অসাধারণ এক নৈকট্যের অনুভূতি দেয়। ছোটবেলায় পাঠ্যবই আর দেশপ্রেমমূলক কিছু "সাহিত্যটাহিত্যের" কল্যাণে সূত্রে উর্দুর প্রতি একটা বিদ্বেষ ছিলো, সেটা কেটেও গেলো প্রথম তারুণ্যে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমরের কিছু আলোচনায় আর কিছু দারুণ বইয়ের সূত্রে, বরং শেষ পর্যন্ত একটা ভালোবাসাই তৈরি হয়েছে।

উর্দু, ফারসি, হিন্দি, সংস্কৃত ভাষার চর্চা জারি থাকাটা আমাদের অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানান রকম বিদ্বেষ থেকে এগুলোকে আমরা ছেঁটে ফেলেছি, এবং সেই মাত্রায় দেউলিয়া হয়েছি। সকলকেই এই বিষয়ে পণ্ডিত হতে হবে, তা নয়। কিন্তু তেমন কিছু বুৎপত্তি থাকা মানুষের কল্যাণে বহু কিছু জানতে এবং রস ও রসদ দুইই পেতে সক্ষম হয়েছি।

আপাতত উর্দু আর হিন্দি যদি হয় (আসলে তো ভাষাদুটো একই), সেটাতেও চলবে। কিন্তু সাধ্যমত বাকিগুলোও চালু করা উচিত। এই বেতার অনুষ্ঠানগুলো জনপ্রিয় হবে? এইটা একটা প্রশ্ন হতে পারে।

আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, যত কষ্ট করে এই বিষয়গুলো জানতে হয়েছে, সেটা বেতারে আয়োজন হিসেবে থাকলে আমিই কৃতজ্ঞ থাকতাম। আর এই ধরনের উদ্যোগগুলো সাধারণত বরং কিছুটা ভর্তুকিতে নেয়া হয়। এমন কিছু খরচ হয় না। কেউ হয়তো এর ইতিহাস আর সমাজবিজ্ঞানের অংশ নিয়েই আগ্রহী থাকবেন, কেউ হয়তো স্রেফ গানেরই সমঝদার!

নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি শক্তিশালী হয় এমন কাজে। দেখবেন, আমাদের চালু বাংলা বহু শব্দ কাছাকাছি আরেকটা অর্থে প্রতিবেশী ভাষাটিতে আছে। সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক, সংগীত, রূপকল্প সব কিছুতেই আধোচেনাকে আরেকটু বেশি চেনা হয়, এতদিন আভাসে যাকে চেনা, তাকে আধোচেনার জায়গায় পাওয়া যায়।  

বহু বিদ্বেষ ও ঘৃণার অবসান ঘটাতে পারে এই রকম একটা ভালো উদ্যোগ।
এমনকি শুধু প্রতীক হিসেবেও এর গুরুত্ব আছে।
আমরা উর্দুকে ঘৃণা করি না।
আমরা হিন্দিকে ঘৃণা করি না।
আমরা বাকিদেরও ধারণ করতে পারি।
এই বার্তা যদি বাংলাদেশ আবারও শক্তিশালীভাবে দিতে পারে আবারও কোনদিন, সেদিন বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেয়ার শক্তি অর্জন করবে। ঐতিহাসিক ভাবেওবাংলাদেশ ছিলো এই সংস্কৃতিগুলোর মিলনভূমি। ক্রমাগত পরের থেকে নিয়ে নিজেকে গড়েছে, তাতেই তার একটা স্বকীয় চেহারা তৈরি হয়েছে। সেই সময়গুলোই ছিলো বাংলার সুবর্ণসময়।

উর্দু আগে ছিলো, মৌখিক নির্দেশে বাতিল হয়েছিলো, এমনটা সত্যি হলে সেটা নির্দেশদাতাদের সংকীর্ণতারই বার্তাবহ। বেতারের প্রচারে যে যথাসম্ভব উদার ও মুক্ত হওয়া দরকার, সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
বরং, কেন বেতার প্রায় কেউ শোনেনা, সেটাই ভাবা দরকার। বছর দশেক আগে অনেকগুলো বেসরকারী রেডিও খুব জনপ্রিয় ছিলো, এখন প্রায় দেখি না। এটা কি ইউটিউব আসার কারণে? বেতারের প্রচারে কোন ধরনের বদল আনলে সেটা আরও শ্রোতাকে কাছে টেনে আনবে?

লেখক : গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ও ইউপিএল প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত।  

news24bd.tv/ডিডি