অর্জিত বিপ্লব ব্যর্থের ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ রুখে দেবে: জামায়াত

জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম।

অর্জিত বিপ্লব ব্যর্থের ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ রুখে দেবে: জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার অর্জিত বিপ্লব ব্যর্থ করে দেওয়ার যেকোনো ষড়যন্ত্র দেশের জনগণকে নিয়ে রুখে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম।

তিনি বলেছেন, গোটা বাংলাদেশকে বিগত স্বৈরশাসক একটি অন্ধকার কূপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। মহান আল্লাহ ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার বিদায় করে সেই অন্ধকার কূপ থেকে উদ্ধার করেছেন। ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ের অর্জিত বিপ্লব ব্যর্থ করে দেওয়ার যেকোনো ষড়যন্ত্র দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে জামায়াত রুখে দেবে, ইনশাআল্লাহ।

আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের সিনিয়র এ নেতা বলেন, বিগত দিনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, মুসলিম জাতি স্বত্বা। বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্দলয়ী নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

জাকাতের গুরত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, খলিফা হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের সময় যাকাত দেওয়ার লোক পাওয়া যেতো না।

যদি এদেশে ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় এখানেও যাকাত দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল জব্বারেরর সভাপতিত্বে ও মহানগরী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইন এর সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মাওলানা মাছুম বলেন, আওয়ামী লীগের জন্মটাই হয়েছে ইসলাম বিদ্বেষের ওপর। ইসলামকে নির্মূল করা। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেটাই গত ১৫ বছর তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরেছে। তারা জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাথে এমন আচরণ করেছে যেই আচরণ পশুও পশুর সাথে করতে পারেনা। তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং করেছে।  এদেশের মানুষের কাছে তাদের অপকর্ম অত্যন্ত পরিস্কার।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঝড়ে আওয়ামী লীগ অপশক্তিকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশ শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানরাও আছে। তারা আলাদা কোনো নাগরিক নয় তারাও বাংলাদেশের নাগরিক। এখানে তারাও জন্ম নিয়েছেন। আমরা মুসলমানরা তাদের সমান অধিকার দিয়ে সম্মলিতভাবে মিলেমিশে এদেশে বসবাস করতে চাই। আমরা কারও দাদাগিরিকে মেনে নেব না। কারও পরিকল্পনা আমরা এখানে বাস্তবায়ন হতে দেব না।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আপনারা এমন নেতাদের পেছনে ঘুরলেন যারা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বললেন দল ও দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব নাই। আমরা ধিক্কার জানাই যারা প্রাচীন দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। তারা এই রকম দেশ, দলের কর্মী এবং জনগণের সাথে তামাশা করেছেন।

ড. মাসুদ বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যে দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়েছেন। এই বক্তব্যের কারণে শুধু গণহত্যা নয় এই দেশ, এই সমাজ এবং এই পৃথিবী যতদিন থাকবে আপনারা আর কোনো আদর্শ নিয়ে রাজীনীতি করতে পারবেন না। জনগণের সিদ্ধান্তেরও দরকার নেই। এই বক্তব্যের কারণে আদর্শিকভাবে এবং নৈতিকভাবে আপনারা আর এ দেশের মানুষের মাঝে উপস্থিত হতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, যখন এই আন্দোলনকে কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না। তখন তারা যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামি ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছর আমাদের কোনো উপকার করতে পারে নাই। কিন্তু ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে আপনি (শেখ হাসিনা) একটা উপকার করে দিয়ে গেলেন। নিষিদ্ধের মাধ্যমে ২৪ এর এই আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে জামায়াতকে আপনি চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এটাই প্রমাণিত হয়েছে ছাত্র সমাজ জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরকে বুকে ধারণ করে বিজয়ের পতাকা তারা উত্তীর্ণ করেছে।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ বলেন, মাদক, চাঁদাবাজমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়তে হলে কিছু কিছু ক্লাব ও দোকানে যেখানে মাদক বিক্রি হয় তা বন্ধ করতে হবে। অতীতে অত্যাচার স্বৈরতন্ত্রের কারণে তাদের যে পরিণতি হয়েছে আবার যদি কেও তা করে তার অবস্থা এর চাইতেও ভয়াবহ হবে। আমাদেরকে একটি সুন্দর সমৃদ্ধির নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে সকলে এক সাথে কাজ করতে হবে।  

সভাপতির বক্তব্যে মহানগরী আমীর আবদুল জব্বার আওয়ামী সরকারের জুলুমের শিকার সকল শহীদদের স্বরণ করে বলেন, সকল হত্যার বিচার হতে হবে। আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জ মহানগরী সংগঠনকে মজবুত সংগঠনে পরিণত করার জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

কর্মী সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আমীর মমিনুল হক সরকার, ঢাকা জেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, নরিসিংদী জেলা আমীর মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন, ইসলামী এডুকেশন সোসাইটির পরিচালক প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূইয়া, মহানগরী নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম, মহানগরী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানয়োর হোসাইন,  ছাত্রশিবির মহানগরীর সভাপতি আসাদুজ্জামান রাকিব, সেক্রেটারি ইসমাঈল হোসাইন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জামাল হোসাইন, মহানগর  কর্মপরিষদের সদস্য, থানা আমীর ও থানা সেক্রেটারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক