‘প্রতিবিপ্লব করতে পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস বন্ধ করা হচ্ছে’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন

‘প্রতিবিপ্লব করতে পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস বন্ধ করা হচ্ছে’

অনলাইন ডেস্ক

গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা চলছে। একের পর এক গার্মেন্টস কারখানা মালিকগণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুরের প্রায় দুই শতাধিক গার্মেন্টস কারখানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত আন্দোলনে বন্ধ হলেও বেশির ভাগ কারখানা পরিকল্পিতভাবে দুস্কৃতিকারীদের হামলা-ভাঙচুরের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় শ্রমিক ঐক্য।

আজ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এ এ এম ফয়েজ হোসেন। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বৈরাচার সরকারের পতনের আজ এক মাস অতিক্রান্ত হয়েছে।

বিগত একমাসে পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসররা ক্ষমতা ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তারা জুডিশিয়াল ক্যু, সনাতন ধর্মালম্বীদের উসকে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা, আনসার বিদ্রোহসহ বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রতিবিপ্লবে রূপ দেওয়ার নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

স্বৈরাচারের দোসররা তাদের কুচক্রী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এখন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান সেক্টর পোশাক শিল্পের উপর ভর করেছে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। পোশাক শিল্প এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। জিডিপিতে পোশাক শিল্পের অবদান প্রায় ১১ ভাগ। পোশাক শিল্পে প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক সরাসরি সম্পৃক্ত যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক এবং পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অন্যান্য বাণিজ্য মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে এই খাতের ওপর। এক সময় পোশাক শিল্প ছিল ১ মিলিয়ন ডলারের শিল্প। যা আজকে দাঁড়িয়েছে ৪৬ মিলিয়নে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। অর্থনীতিবান্ধব এ শিল্প আরেকটু পরিকল্পিতভাবে গোছানো সম্ভব হলে খুব তাড়াতাড়ি আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলেও জানানো তারা।

গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জুলুমের শিকার হচ্ছে দাবি করে তারা বলেন, বছরের পর বছর তাদের বেতন ভাতা নামকাওয়াস্তে বাড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলতে গেলে বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় তাদের ওপর পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে সব আন্দোলনকে স্তমিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিগত দেড় দশকে গার্মেন্টস শ্রমিকের মজুরি যৎসামান্য বেড়েছে। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে গার্মেন্টস মালিকরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা পেলেও তার ভাগ শ্রমিকরা পায়নি। বরং সে সময়ে চাকরি হারিয়ে হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেকার হয়েছে। ২০২৩ সালে নভেম্বর-ডিসেম্বর নূন্যতম মজুরির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গাজীপুরে নারীসহ চারজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে। একই আন্দোলনে অসংখ্য শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়ে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে শত শত গার্মেন্টস শ্রমিককে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী সরকারের তল্পিবাহক ও আর্শীবাদপুষ্ট ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা শ্রমিকরা প্রত্যাখান করেছে।

পরিশেষে গার্মেন্টস শিল্প রক্ষায় সাভার-আশুলিয়া, মিরপুর, ইপিজেড অঞ্চলসহ দেশের সকল পোশাক শিল্প এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে শ্রমিক ও গার্মেন্টেসের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানিয়ে এবং জড়িতদের খুঁজে দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়। একই সাথে শ্রমিক-জনতাকেও তাদের কর্মক্ষেত্রকে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের কারিগর ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর বিপ্লবী ছাত্রদের অভিনন্দন জানানো হয়। আরোও অভিনন্দন জানানো হয় এদেশের খেটে খাওয়া শ্রমিক-জনতাকে যারা শিক্ষার্থীদের আহ্বানে রাজপথে স্বৈরাচার পতনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করেননি তাদের।  শহিদ আবু সাঈদ-গার্মেন্টস কর্মী আব্দুল আজিজসহ এ আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে স্বরণ করে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। শহীদ ও পঙ্গুত্বদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন শহীদ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান, বাংলাদেশ অটোরিক্সা হালকাযান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম ফারুক, ন্যাশনাল ওয়াকার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জনি, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার, বাংলাদেশ দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সহসভাপতি নুরুল আমিন, বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব তানভীর হোসাইন, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মীর মো. জুলহাস প্রমুখ।

news24bd.tv/তৌহিদ