দান-সদকায় কৃপণতা ধ্বংসের কারণ

দান-সদকায় কৃপণতা ধ্বংসের কারণ

মাইমুনা আক্তার

ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর নিয়ামত। মানুষের উচিত সেই নিয়ামতের শোকর করা এবং তা মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে পরিচালনা করা। আল্লাহর ঠিক করা নিয়মের বাইরে গিয়ে ধন-সম্পদ থেকে উপকৃত হওয়া যায় না। যেমন অনেকেই আছে ধন-সম্পদ ধরে রাখার জন্য কৃপণতা করে।

অথচ এটা মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত একটি কাজ।

পবিত্র কোরআনে কৃপণতা ও কৃপণতায় উৎসাহ দেওয়াকে মুনাফিকের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের অংশ, তারা মন্দ কাজের আদেশ দেয়, আর ভালো কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা নিজেদের হাতগুলো সংকুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে তিনিও তাদের ছেড়ে দিয়েছেন, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক।

’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৭)

কৃপণতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ফলে তারা নিজেদের অজান্তে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। কৃপণতা পূর্ববর্তী অনেক জাতির ধ্বংসের কারণ হয়েছে। তাই রাসুল (সা.) স্বীয় উম্মতদের এই অভ্যাস ত্যাগ করার তাগিদ দিয়েছেন।

একদা রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)।

শুধু ইহকালীন শাস্তিই নয়, কৃপণতার পরকালীন শাস্তিও ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেই সেই শাস্তির কিঞ্চিত বিবরণ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, নিশ্চয়ই পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং যারা সোনা ও রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য (খুবই) অকল্যাণকর, তারা যাতে কৃপণতা করেছে, সত্বর কিয়ামতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার কেবল আল্লাহরই। তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)

আবু হুরায়রা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, ‘আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত অর্থ। ’ অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) সুরা আলে ইমরানের ১৮০ নম্বর আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। (বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)

তাই আমাদের উচিত খরচে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। এত কম খরচ না করা যে তা কৃপণতার পর্যায়ে চলে যায়, আবার এত বেশি খরচ না করা যে তা অপব্যয়ের পর্যায়ে চলে যায়। এটাই মহান আল্লাহর আদেশ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত কোরো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)

মহান আল্লাহ সবাইকে কোরআনের নির্দেশনাগুলো অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।

 

এই রকম আরও টপিক