হঠাৎ ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসে উপচে পড়া ভিড়

হঠাৎ ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসে উপচে পড়া ভিড়

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের পাসপোর্ট তৈরি ও নবায়নের হিড়িক পড়েছে। এখানে প্রতিদিন তিন শতাধিকেরও বেশি মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছে, এদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এই উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।

কেউ এসেছেন নতুন পাসপোর্ট করতে, কেউ পুরোনো পাসপোর্ট রি-ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে। উপচে পড়া ভিড় সেবা প্রত্যাশীদের। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়ালের অপেক্ষায় থাকছে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীরা। গত সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনই শত শত মানুষ আসছেন পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ নিয়ে।
অনেকেই ছোট বাচ্চাসহ পরিবারের সবাই, আবার কেউ ছাত্র-ছাত্রী, বৃদ্ধরাও পিছিয়ে নেই।

জিজ্ঞাসা করলে, তারাই বলছেন পারপোর্ট করতে আসা বেশিরভাগই সনাতন ধর্মের। যেখানে সারাদিনে নতুন পুরাতন মিলে ৬০ টির বেশি পাসপোর্টের আবেদন জমা হতো না, সেখানে অতিরিক্ত সেবা গ্রহীতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয় ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা নেওয়া। তারপর ফিঙ্গার প্রিন্টসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া।

কিন্তু এ কয়েকদিনে এতো মানুষের যে ভীড়, আবেদন জমা দেওয়ার জন্যই তৈরি হয় বিশাল লাইন। এমন পরিস্থিতিতে জনবল কম থাকায় একদিনে আবেদন জমাসহ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনটাই বলছেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা। ফলে পাসপোর্ট করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে একাধিকবার আসতে হচ্ছে। এটি এক প্রকার ভোগান্তি বলে জানান সেবা গ্রহীতারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ি থেকে আসা পার্বতী বর্মন নামে এক স্কুল-ছাত্রী জানান, বর্তমানে দেশে গণ্ডগোল চলার কারণে আমি পাসপোর্ট করতে এসেছি। পাসপোর্ট হয়ে গেলে আমি পড়াশোনা করার জন্য ভারতে চলে যাব।

গড়েয়া থেকে আসা যশোদা রানী নামে আরও এক ছাত্রী বলেন, আমি সকালে এসেছি। এসে যেটা দেখলাম, অনেক মানুষের ভীড়। তবে এদের মাঝে বেশিরভাগই হিন্দু। পাসপোর্ট করার কারন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অনেকেই চিকিৎসার জন্য যায়। বর্তমান দেশের আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে অন্য দেশ থেকে ঘুড়ে আসার জন্য পাসপোর্ট করা।

লাইনে দাড়িয়ে থাকা গৌতম নামে এক ছাত্র বলেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মধ্যে খুব বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার জন্য সবাই পাসপোর্ট করতে আমরা এসেছি। পাসপোর্ট করে আমি ভারতে গিয়ে পড়াশোনা করবো। এছাড়া অনেকেই বলছেন চিকিৎসার জন্য, কেউ বলছেন তীর্থে যাবে আবার কেউবা বলছেন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে যাবে।

আরও পড়ুন: আয়া থেকে কোটিপতি ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তারাণী

এ বিষয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-সহকারি পরিচালক মোঃ রুকুনুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ৬০-৭০ টি আবেদন জমা হতো। আর এখন প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টিরও বেশি পাসপোর্ট এর আবেদন জমা হয়। হঠাৎ অতিরিক্ত সেবাগ্রহিতা হওয়ায় আমাদের যে পরিমান জনবল আছে, সে অনুযায়ী আমাদের পক্ষে তাদের কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়ে উঠতেছে না। সেক্ষেত্রে আমরা রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেবা গ্রহীতাদের সঠিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষদের মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ ভাগই সনাতন ধর্মের।

news24bd.tv/JP