৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি সংবাদকর্মীদের

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে মানববন্ধন

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি সংবাদকর্মীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে হামলাকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন মিডিয়া গ্রুপে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মিডিয়া গ্রাউন্ডের সামনে এক মাননবন্ধনে অংশ নিয়ে তারা বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের বের না করলে দেশের প্রতিটা জেলা উপজেলায় প্রতিবাদের ঝড় উঠবে।

সংবাদকর্মীরা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বলবো আপনারা ভালো হয়ে যান।

যদি আমাদের ওপর চোখ রাখেন তাহলে জনগণ দিয়ে আপনাদের নির্মূল করা হবে। সন্ত্রাসীদের আর কোন ছাড় নয়। আমরা জানাতে চাই আমরা সাংবাদিকরা অস্ত্র হাতে নিব না। আমাদের কলম আছে, আমরা সত্যাটা লিখতে চাই।

মানববন্ধনে কালের কণ্ঠের জৈষ্ঠ সাংবাদিক ও সহকারী সম্পাদক আলি হাবিব বলেন, ‘আমরা সবসময় মানুষের পক্ষে কথা বলেছি। আমরা মানুষের কথা তুলে ধরেছি। মানুষের দাবির পক্ষে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু যে ঘটনাটি গতকাল ঘটে গেলো এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা কারা তাদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে যেনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। ’

মানববন্ধনে বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার বলেন, ‘আমাদের ওপর গতকাল যে হামলা হয়েছে সেই হামলার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমদের নেই। আমাদের গণমাধ্যমের শক্তির ওপর হামলা হয়েছে। এখানে যারা কর্মরত সাংবাদিক আছেন তাদের কলমের বিরুদ্ধে লাঠি এসেছে। কলমকে কখনো লাঠি দিয়ে রুদ্ধ করা যাবে না। অস্ত্র দিয়ে কণ্ঠকে রুদ্ধ করা যাবে না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরার মিডিয়া গ্রুপের আমরা সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এসে আমাদের সঙ্গে ঐক্যতা প্রকাশ করেছেন। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই সন্ত্রাসীরা ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। যারা হামলা চালাচ্ছে এরা কখনোই সত্যের পক্ষে নয়। এরা অসত্য ও অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান করে। সন্ত্রাস দিয়ে সত্যকে কখনো রুদ্ধ করা যায় না। আমরা সত্যনিষ্ঠ থাকবো। আমরা কখনোই অন্যায়ের কাছে আপস করবো না। আমরা প্রতিরোধ করবো। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবো, সরকার যেনো সমস্ত মিডিয়ার নিরাপত্তায় সঠিক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। ’

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের যে ঐক্যবদ্ধতা ও দৃঢ়তা যেনো সবসময় প্রকাশ পায়। আমরা এক থাকবো। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখামাত্র আমরা তাদের প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করবো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আমরা তাদেরকে সম্মান জানাই। এখানে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে। তারা নিজেদের স্বার্থে এসব হামলা চালাচ্ছে। কাজেই ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে এখানকার আক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। এই হামলা হলো কিছু দুষ্কৃতিকারীর হামলা। তাই এই দুষ্কৃতিকারীদের আমরা কোনো সময় কোনো প্রকার আশ্রয়-প্রশ্রয় ও জায়গা দিবো না। ’

রেডিও ক্যাপিটালের সমন্বয়ক রুহুল আমিন রাসেল বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) দুপুর বেলায় একটি সন্ত্রাসী দল মিছিল সহকারে স্লোগান দিতে দিতে আমাদের প্রিয় কর্মস্থল ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে মধ্যযুগীয় নারকীয় হামলা চালিয়েছে। এই হামলা আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। এই হামলার শুরুতেই তারা ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সের রেডিও ক্যাপিটালের ভিতরে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর হামলা চালিয়েছে। আমাদের জুনিয়র সহকর্মী ও নারী সহকর্মীদের উপর আঘাত হেনেছে। আমরা এই ধরনের নারকীয় তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম মানুষের শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল। আমরা মনে করি, মানুষের ভরসার আশ্রয়স্থলে এই হামলা গণতন্ত্র ও সংবিধানের ওপর হামলা। কারণ সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমের রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই ভূমিকা যারা ব্যাহত করতে চায়, যারা গণতন্ত্র নষ্ট করতে চায়, আমাদের মহান সংবিধানকে নস্যাৎ করতে চায়, তারাই এই হামলার সঙ্গে জড়িত। আমরা অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দ্রুত তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন। অন্যথায় সারা বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা রাজপথে সোচ্চার প্রতিবাদ জানাবে। ’

নিউজ ২৪ এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে ভয় পেয়ে একত্রিত হইনি। আমরা কোন চাপের মুখে একত্রিত হইনি। আমরা আমাদের পেশার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য একত্রিত হয়েছি। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার উপর যে হামলা হয়েছে, এখানে প্রায় প্রত্যেকটি গাড়ি ভাঙা হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠান যে সকল কর্মীরা অল্প টাকা বেতন পান তাদের মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমাদের অফিস কে সুন্দর করার জন্য আমরা যে সকল ডেকোরেশন ব্যবহার করি সেগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রেডিও ক্যাপিটালের ভিতর যেভাবে হামলা করা হয়েছে তাতে নারীকর্মীরা খুবই আতঙ্কিত হয়েছিলো। তারা তখন রেডিওর ভেতরে কাজ করছিল সেখানেও গিয়ে হামলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। মোট কথা গতকাল এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ সকল ঘটনা ঘটার পরও আমরা বিন্দুমাত্র ভয় পাইনি। আমরা যদি ভয় পেতাম তাহলে আমরা অফিসে আসতাম না। অফিসে হামলার ঘটনা শুনে প্রত্যেকটা কর্মীর ছুটে এসেছেন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ যেহেতু গণমানুষের কথা বলে সেহেতু এটা শুধু গণমাধ্যমের ওপর হামলা নয় এটা বাংলার সকল মানুষের উপর হামলার চেষ্টা। আমরা সে চেষ্টা সাংবাদিকতা দিয়ে রুখার চেষ্টা করব। সুযোগসন্ধানীরা ভেবেছেন ভয় দেখিয়ে আমাদের কলম বন্ধ করে দেয়া হবে, ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়া হবে। আমি বলব তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আমি মনে করি তারা সামনে বুঝতে পারবে, যে তারা কোথায় হাত দিয়েছে। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই আপনারা খুঁজে বের করুন কারা এ হামলা চালিয়েছে। আমাদের কাছে যে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে তা আমরা সাপ্লাই দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের একটাই কথা আমরা কোন শক্তির কাছে মাথানত করবো না, আমরা মাথা উঁচিয়ে কাজ করবো। ’

মানবন্ধনের সঞ্চালনা করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের উপ সম্পাদক হায়দার আলী। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকে লিখে আসছেন। আমরা আগামীতেও লিখে যাবো, কোন সন্ত্রাসীদের হামলা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বেনজিরের বিরুদ্ধে যেভাবে মুখ উন্মোচন করেছি, একইভাবে আগামীতে যে সরকারই আসুক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কারো এক ফোটা ছাড় নেই। যে সকল সন্ত্রাসীরা ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার ওপর হামলা করেছে তাদের সকলের চেহারা আমাদের সিসিটিভিতে আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়াসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা ছাত্রদের পক্ষে ছিলাম। এই হামলার পর শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের ওপর হামলার এই ঘটনা নিন্দনীয় বলে তারা আখ্যা দিয়েছেন। পরবর্তীতে আমাদের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার ওপর যদি কেউ হামলা করতে আসে, তাহলে শিক্ষার্থীরা এর তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সন্ত্রাসীদের মতন আমরা হামলা করতে জানি না, আমাদের কলম আছে আমরা কলম দিয়ে লিখতে জানি। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ সবসময়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। ’

মানববন্ধনে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘একত্রিত হওয়টাই আমাদের বড় শক্তি। গতকালকে (সোমবার) আমাদের মিডিয়ার ওপর যে আক্রমণ হয়েছে সেটা ন্যাক্কারজনক। আমি এই দুর্বৃত্তদের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি দাবি করি। এই ধরনের হামলা করে এতো বড় মিডিয়া হাউজের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। যে যত চেষ্টাই করুক আমরা একত্র আছি। একত্র থাকবো বলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আমরা কাজ করি। গতকালের আক্রমণের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আমাদের জন্য সহানুভূতি ব্যক্ত করেছেন। এর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন নেতা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন তারা আমাদের মিডিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। সুতরাং আমরা মনে করি আমাদের পাশে সমগ্র দেশ আছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কলম দিয়ে লিখে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখি। আমরা সত্য কথা বলি। আমরা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলি। আমরা প্রথম বেনজরির মতো দুর্বৃত্তকে ধরেছিলাম। আমাদের কলম সচল থাকবে। আমাদের ক্যামেরা সচল থাকবে। আমাদের কর্মী ভাইয়েরা সচল থাকবে। কোনো ভয়ের কাছে আমরা মাথানত করবো না। আমরা কোনো ভয়ভীতি মানবো না। আমরা আমাদের কাজটি সঠিকভাবে পালন করবো। ’

মানববন্ধনে কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলা নিউজ, নিউজ ২৪, টি স্পোর্টস ও ক্যাপিটাল রেডিও’র প্রায় হাজারখানেক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে হুঁশিয়ারি বার্তা জানিয়েছেন।

news24bd.tv/FA

এই বিভাগের পাঠকপ্রিয়