গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি-খামার, আবেদ আলী সম্পর্কে আরও যা জানা গেল

গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি-খামার, আবেদ আলী সম্পর্কে আরও যা জানা গেল

মাদারীপুর প্রতিনিধি

সারাদেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দবিন্দুতে সৈয়দ আবেদ আলী। প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের এই গাড়িচালকসহ ১৭ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আবেদ আলী কীভাবে কোটিপতি এবং নিজ এলাকায় কীভাবে রাজনৈতিক নেতায় রূপান্তরিত হলেন তা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।

কুলি থেকে কোটিপতি বনে গেছেন পিএসসির ড্রাইভার আবেদ আলী।

'তার বিপুল পরিমানের অর্থ হইছে। সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে'। এভাবেই আবেদ আলীকে নিয়ে বললেন এলাকার লোকজন।  

আবেদের মা-বাবা এক সময় ভিক্ষা করে পেট চালাতেন বলে জানান তার প্রবীণ এক প্রতিবেশি।

তিনি বলেন, 'হের মায়ে-বাপে ভিক্ষা করতো। আর যাই কমু হাচা কথা কমু। আমাগো তো বয়স কম না। অনেক কষ্ট করে ওরে লেহাইছে পড়াইছে'।

৮ বছর বয়সে ঢাকায় পাড়ি জমিয়ে কুলির কাজ শুরু করেন আবেদ আলী। এ বিষয়ে একটি জনসভায় গর্ব করে ভাষণ দিয়েছিলেন তার ছাত্রলীগ করা ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। সিয়াম বলেছিলেন, (বাবা) সে হচ্ছে কুলিগীরি করে ৫০ টাকার পুঁজি দিয়ে সে তার ব্যবসা শুরু করে। এখন একটা লিমিটেড কোম্পানির মালিক'।  

ঢাকার ফুটপাতে ঘুমানো সেই আবেদ আলী গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। এরপর হাতে আসে আলাদিনের ইচ্ছা পূরণের চেরাগ, অর্জন করেন বিপুল সম্পদ ও ক্ষমতা। ইচ্ছা পোষণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার।  

এলাকাবাসীর বিস্ময়, 'এই যে বাড়ি গাড়ি এত সয় সম্পত্তি, একজন সাধারণ ড্রাইভার হয়ে সে কীভাবে এটা কামাই করলো। '

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে আবেদ আলী জীবন। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই কৃষি কাজ ও ছোট ভাই রিকশা চালালেও জাদুরকাঠির বলে শিল্পপতি বনে গেছেন সৈয়দ আবেদ।

এলাকার একজন বলেন, 'একজন ড্রাইভারের যে লাইফ স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতো এলাকায়। '

আরও একজন বলেন, 'হুট করে এসে উনি ব্যাপক পরিমাণে দান খয়রাত করছে।  তারপর বিলাসবহুল খামার করেছে।  এটা আসলে অবৈধ টাকা ছাড়া কখনও সম্ভব নয়। '

বিত্ত বৈভবে ফুলে-ফেঁপে ওঠা আবেদ, নাম থেকে মীর ফেলে দিয়ে যুক্ত করে নেন সৈয়দ। এরপর সৈয়দ আবেদ আলী সেজে নিজের এলাকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো মহিমান্বিত পুরুষ হিসেবে আবির্ভূত হন।  

আরও এক এলাকাবাসী বলেন, আমরা সবাই জানতাম উনি হলো মীর বংশ। কিন্তু মীর থেকে কেমনে সৈয়দ আসলো আমরা সেটা জানি না। ' 

গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি, সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তুলছেন গরুর খামার ও মার্কেট। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রয়েছে থ্রি স্টার হোটেল।

আরেক প্রতিবেশী বলেন, 'উনি দলীয় কোনো পদে ছিল না। উনার ছেলেও ছিল না। যা করছে এটা উনি খুব অন্যায় করছে দলের সাথে। আওয়ামী লীগের সাথে খুব অন্যায় করছে উনি। '

এলাকার সুনাম ক্ষুন্ন করার কারণে তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

আবেদ আলীর শাস্তি চেয়ে আরও একজন বলেন, 'সম্প্রতি তিনি দেশে এসে বিপুল টাকা খরচ করে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানের পদে মাঠে নামেন তার ছেলে এবং সে। ডাসারের এরক ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

এদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ আফরোজ।  

তিনি বলেন, তার যদি কোনো অবৈধ সম্পদ এই উপজেলায় থাকে আমরা অবশ্যই খোঁজ খবর নিব এবং আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্খকে অবহিত করবো।

আরও পড়ুন: পিএসসিকেও 'বোকা' বানালেন আবেদ আলী

তিনি আরও বলেন, সড়কের জায়গা দখল করে উনার একটি ফার্ম করার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে সেটির বিষয়ে আমরা তাঃক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে ছিলাম। তার সেই ফার্মটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।  

news24bd.tv/TR