যেভাবে হতো প্রশ্নফাঁস, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য

ফাইল ছবি

যেভাবে হতো প্রশ্নফাঁস, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন গ্রেপ্তারের পর থেকেই বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। কীভাবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে প্রশ্নফাঁস করতেন অভিযুক্তরা, কীভাবে হতো টাকা লেনদেন সবকিছুই উঠে আসছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির একটি সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আর এতে জড়িত ছিলেন পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা।

মূলত তারাই ছিলেন মূল হোতা। কঠিন নিরাপত্তা বলয় ভেঙে প্রশ্নপত্র বের করতেন তারা। এরপর চক্রের বাকি সদস্যদের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছে পৌঁছে যেত প্রশ্নপত্র।

জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বাকিদের হাতে তুলে দিতেন পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির।

চক্রের বাকি কারও কাজ ছিল প্রার্থী জোগাড় করা, কারও কাজ তাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে বনিবনা করা। প্রশ্নপত্র ফাঁস করার পর প্রার্থী খুঁজতে কাজ করতেন অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম। পরে পরীক্ষার্থীদের বাসায় এনে সমাধান করা উত্তরপত্র পড়াতেন তারা।

আলোচিত পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর কাজ ছিল বড়। তিনি করতেন টাকার লেনদেন। প্রশ্নফাঁসের বুথও পরিচালনা করতেন তিনি। এভাবে তার মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা লুটে নিতো চক্রটি।

এদিকে জানা গেছে, সিআইডির তদন্তে অনেক হাইপ্রোফাইলের নামও উঠে এসেছে। সিআইডি বলছে, গত ৫ জুলাই রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস করে চক্রটি। চুক্তি অনুযায়ী পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থীদের বাসায় এনে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়েছেন। তদন্তে এখন পর্যন্ত অনেকের নাম সামনে এসেছে। তাদের মধ্যে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিও রয়েছে। সবার তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

এর আগে, গত রোববার (৭ জুলাই) বিসিএসসহ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশজুড়ে তৈরি হয় আলোড়ন। পরে সোমবার সিআইডি সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পিএসসির তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর রাতেই রাজধানীর পল্টন থানায় বিপিএসসি আইনে মামলা দায়ের করেন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নিপ্পন চন্দ্র চন্দ। মামলায় ৩১ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০/৬০ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ১৭ জনকে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়েছে।

মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সৈয়দ আবেদ আলীকে (৫২)। তিনি দীর্ঘদিন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই নম্বর আসামি নোমান সিদ্দিক (৪৪)। লক্ষ্মীপুরের রামগতি এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্টস (পোশাক) ব্যবসায়ী নোমান থাকতেন মিরপুর-১০ সেনপাড়া পর্বতা এলাকায়। তিন নম্বর আসামি খলিলুর রহমান (৩৮)। চার নম্বর আসামি মো. সাজেদুল ইসলাম (৪১)। পাঁচ নম্বর আসামি মিরপুর ইসিবি চত্বরের ডেভেলপার ব্যবসায়ী আবু সোলেমান মো. সোহেল (৩৫)। ছয় নম্বর আসামি পিএসসির উপ-পরিচালক (সিলেট) জাহাঙ্গীর আলম (৫৮)। সাত নম্বর আসামি পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবীর (৪৯)। আট নম্বর আসামি গাজীপুর সেনানিবাসের অডিটর প্রিয়নাথ রায় (৫১)। নয় নম্বর আসামি মিরপুরের জাহিদুল ইসলাম (২৭)। দশ নম্বর আসামি পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর (৫৭)।

বাকি আসামিরা হলেন নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুল হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিটন সরকার ও সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।

এদিকে, এখনো পলাতক রয়েছে পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বনিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।

news24bd.tv/SHS