রাইসির মৃত্যু খামেনির উত্তরসূরী হওয়া নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিতে পারে

সদ্য প্রয়াত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি।

রয়টার্সের বিশ্লেষণ

রাইসির মৃত্যু খামেনির উত্তরসূরী হওয়া নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিতে পারে

অনলাইন ডেস্ক

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসির মৃত্যু যারা তাকে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনির স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন তাদের পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিয়েছে এবং খামেনির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ আসনে কে বসবে এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

এতোদিন মনে করা হতো খামেনির মৃত্যুর পর ইবরাহিম রাইসি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। রাইসির ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে ইরানের ক্ষমতা কট্টরপন্থীদের হাতে চলে যায়, যারা দেশের অভ্যন্তরে ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণে এবং আঞ্চলিকভাবে ক্ষমতাধর শত্রুদের বিরুদ্ধে ইরানের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালাচ্ছিলো।

রাইসির পেছনে খামেনির পূর্ণ সমর্থন ছিল, যিনি কিনা নিজেও ১৯৮৯ সালে ইরান প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

খামেনি যদিও এখনও কোনো উত্তরসূরী নির্বাচন করেননি, কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন যে দুইজন ব্যক্তিকে সম্ভাব্য ধর্মীয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো তাদের মধ্যে রাইসি একজন। অপরজন হলেন খামেনির দ্বিতীয় ছেলে মুজতবা, যে কিনা পর্দার আরালে থেকে কলকাঠি নাড়ে বলে অনেকেই মনে করেন।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ভালি নাসিরের মতে, রাইসি অবশ্যই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হতে চাইতেন। তার মৃত্যুতে এখন আর কোনো প্রতিযোগী নেই, তাই এখন নতুন প্রতিযোগীর আবির্ভাব হবে এবং তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

রাইসির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে৪ খামেনির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ মিলে যেতো, এবং পরমাণু আলোচনা থেকে নিজ দেশে বিক্ষোভ দমনের মতো যতো সিদ্ধান্ত রাইসি নিয়েছেন সবগুলোর পেছনে খামেনির সমর্থন ছিলো।

মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কট্টরপন্থীরা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও ভোটারের উপস্থিতি ছিলো নগণ্য, যা ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রতি জনগণের অনাস্থাকেই প্রমাণ করে।

সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে রাইসির নাম সম্ভাব্য তালিকায় থাকলেও মুজতবার প্রার্থীতা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, যিনি কিনা ইরানের কম শহরে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন।

খামেনির সাথে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের তথ্যমতে, ইরান যাতে পুনরায় বংশ পরম্পরায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে না যায় সেজন্য খামেনি নিজের ছেলেকে সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দেখতে চান না। খামেনির এই অবস্থানের কারণে মুজতবা এবং আধুনিক ইরানের প্রতিষ্ঠাতা খোমেনির নাতি আলী খোমেনি উভয়েরই সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বাতিল হয়ে গেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, রাইসির মৃত্যুর ফলে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে একজন সম্ভাবনাময় প্রার্থীকে হারিয়েছে ইরান। আশঙ্কা করা হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোর এবং কম অঞ্চলের ধর্মীয় নেতৃত্বের মাঝে ক্ষমতায় আরোহন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

news24bd.tv/ab