প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাংক ভূমি সম্মেলনে বাংলাদেশ

ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ্র

প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাংক ভূমি সম্মেলনে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মর্যাদাপূর্ণ ‘বিশ্ব ব্যাংক ভূমি সম্মেলন ২০২৪’-এ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। গত ১৩ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবার প্রথমবারের মতো বিশ্ব ব্যাংক ভূমি সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে স্মার্ট ভূমিসেবা কার্যক্রম তুলে ধরে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘ভূমির দখলিস্বত্ব ও জলবায়ু কার্যক্রমে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ’।

 

সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ভূমি খাত-সংক্রান্ত সরকারি ও বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও অংশীজন ভূমি মালিকানা, ভূমি-সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন, ভূমি প্রশাসন ও নাগরিক ভূমিসেবা নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনে তাঁরা অভিজ্ঞতা, তথ্য ও জ্ঞান বিনিময় করেন।

ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরমেন্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো. জাহিদ হোসেন পনিরকে সম্মেলনের ‘আঞ্চলিক পারিচালন কর্মশালা’ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মনোনীত করেন। ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানের দিকনির্দেশনায় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর আওতায় গৃহীত স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের জন্য পৃথক পৃথক পারিচালন কর্মশালায় কারিগরি সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং নতুন উদ্ভাবনগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ছিল। বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরের মেইন কমপ্লেক্স সি টু হলে সম্মেলনের শেষ দিন ১৭ মে  যুক্তরাষ্ট্র সময় সকালে, ‘প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ: ভূমি অধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু সহনশীলতা’ শীর্ষক দিনব্যাপী আয়োজিত কর্মশালায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। এ কর্মশালায় পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে।

ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিশ্ব ব্যাংক ভূমি সম্মেলন ২০২৪-এ বাংলাদেশের সফল অংশগ্রহণের বিষয়ে বলেন, “এই সম্মেলনে আমাদের উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ’-এর মাধ্যমে ভূমি সংস্কারে আমাদের অবিচল অঙ্গীকারের প্রতিফলন। বাংলাদেশের নাগরিকদের কল্যাণ ও টেকসই উন্নয়নে ভূমি প্রশাসনে স্মার্ট উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে নাগরিক ভূমি সেবা প্রদানের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা কাজ করে যাব। ”

পরিকল্পনা অনুযায়ী যুগ্ম সচিব জাহিদ হোসেন এই কর্মশালায় বাংলাদেশের ‘স্মার্ট ল্যান্ড সার্ভিস’ কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। বর্তমানে এ কার্যক্রমের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য অনলাইনে ১০ টিরও বেশি ভূমি সম্পর্কিত পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন কীভাবে বাংলাদেশের কোটি নাগরিকের ভূমি মালিকানার নিরাপত্তা তথা দখলিস্বত্ব নিশ্চিত করেছে তা তিনি বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাখ্যা করেন।

সম্মেলনে ভূমি খাতে নাগরিক সেবা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীকেন্দ্রিক নকশা, অত্যাবশ্যকীয় সেবার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয়, অটোমেশন, দক্ষ কর্মপ্রবাহ ব্যবস্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন, শক্তিশালী ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং ওপেন ডেটা গভর্নেন্স নীতিমালার প্রতি অঙ্গীকার।

জমি হাতবদলের পর নিবন্ধন, নামজারি, খতিয়ান ও ম্যাপ প্রস্তুতের সমন্বিত অটোমেশনের ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার ব্যাপারেও জানানো হয়। এছাড়া, ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের কারণে ভূমি খাতে কয়েকগুণ রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যাপারটি সম্মেলনে ভূয়সী প্রশংসিত হয়।

জলবায়ু সহিষ্ণুতা, সবুজায়ন এবং নগরায়নের উপর বাংলাদেশের ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে।  

উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ই-নামজারি ব্যবস্থার জন্য ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০ এবং ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার জন্য ২০২২ সালে আইটিইউ ডব্লিউএসআইএস পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

বিশ্বব্যাংকের ভূমি সম্মেলন ২০২৪-এ অংশগ্রহণের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সাধারণত ভূমি খাতে বিনিয়োগে নির্দেশনা ও অবহিতকরণ, বহুপক্ষীয় অংশীজনের আলোচনা ও সহযোগিতাকে সহজতর করা এবং এগিয়ে নেওয়া, প্রমাণ-ভিত্তিক নীতি প্রণয়নে উৎসাহ প্রদান এবং উদীয়মান উত্তম চর্চা ও উদ্ভাবনী গবেষণার ওপর জ্ঞান ও তথ্য বিনিময়ের একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক ভূমি সম্মেলন আয়োজন করে থাকে। ২০২৪ সালের ভূমি সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক এ লক্ষ্যে ভূমি মালিকানা নিশ্চিতকরণের জন্য কার্যকর কৌশল এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অভিযোজনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণের উপায়গুলেঅ তুলে ধরার ওপর জোর দেয়।  

এবারের সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাংক, উন্নয়ন অংশীদার, নাগরিক সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের অংশগ্রহণে আয়োজিত সম্মেলনের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল উচ্চ পর্যায়ের উদ্বোধনী ও সমাপনী সেশন, বিষয়ভিত্তিক সেশন, গবেষণা সেশন, আঞ্চলিক পরিচালন কর্মশালা, বিশ্বব্যাপী ভূমি বিষয়ক উদ্যোগ এবং নতুন উদ্ভাবন প্রদর্শনী।

উল্লিখিত আঞ্চলিক পরিচালন কর্মশালা অধিবেশনটি আঞ্চলিক কারিগরি সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং নতুন উদ্ভাবনসমূহের পর্যালোচনা করা এবং সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ’ জ্ঞান ও তথ্য বিনিময়ের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছিল। এবার এতে ভারত, ভূটান, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, লাওস, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভানুয়াতু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টোঙ্গা প্রমুখ দেশের প্রতিনিধিরা বিশ্ব ব্যাংক ভূমি সম্মেলনের এই অধিবেশনে অংশ নেন।
news24bd.tv/আইএএম