ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর করলে শাস্তি কি?

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইলস্থ আরিফ ফিলিং স্টেশনে অগ্নি নির্বাপণের সময় ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি ভাঙচুর

ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর করলে শাস্তি কি?

তালহা বিন জসিম

বাংলাদেশের একমাত্র বাহিনী যারা সবসময় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। এজন্য নিজের জীবন বিপন্ন হলেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। ১৯৭১ সালের পর থেকে মানুষের জীবন সম্পদ রক্ষায় অপারেশনাল কাজে এই বাহিনীর আত্মদান করেছেন ৪৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অসংখ্য।

অথচ গত ২৫ এপ্রিল রাতে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইলস্থ আরিফ ফিলিং স্টেশনে অগ্নি নির্বাপণের সময় ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি ভাঙচুর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করা হয়। যেসব অভিযোগে গাড়ি ভাঙচুর করা হলো তার সত্যতা নিয়ে একবারও সচেতন ভাবে ভাবলেন না? বলা হলো ফায়ার সার্ভিস দেরি করে এসেছে। একবারও কি ভাবলেন? আগুন লাগার কারণে দিনাজপুর থেকে দশমাইল, বীরগঞ্জ-দশমাইল রাস্তা গাড়ির কারণে যানজট হয়। এবার বলেন ফায়ার সার্ভিস আসবে কোন রাস্তা দিয়ে।

আপনি-আপনারা কি ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি সাইড দিয়েছিলেন? কি জবাব আছে আপনাদের কাছে?

একবার বলুনতো ফায়ার সার্ভিসে কল দেয়ার পর বলেছে, ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়েছে এখন রাত, এখন অনেক গরম, এখন অনেক শীত আমরা আসতে পারবো না বা কখনও বলেছে কিছু টাকা পাঠান তারপর যাবো, কখনও কি দেখেছেন অপারেশনে যাওয়ার পথে ফায়ার সার্ভিস একটি গাড়ি রাস্তার পাশে থামিয়ে চা খাচ্ছে? তাহলে কেনো নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে ভাবছেন না ফায়ার সার্ভিস কি কারণে দেরি করে আসবে?

এর আগে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি সাজসরঞ্জাম ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকে হয়তো জানেন না তাই এই অপরাধ করছেন। এইযে গাড়ি সাজ সরঞ্জাম ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধর কর এমন কি ফায়ার সার্ভিস অগ্নি নির্বাপণের সময় সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সাজ সরঞ্জাম ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধর করা বাংলাদেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি আগুন নির্বাপণের সময় বাধা প্রদান করলে শাস্তির বিধান রয়েছে।

অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ আইনের ১৯ ধারায় রয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং ধারা ১৪ তে বর্ণিত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে তাহার বা, ক্ষেত্রমত, উহার কার্য-সম্পাদনে ইচ্ছাপূর্বক বাধা প্রদান করেন বা অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত সাজ-সরঞ্জাম বা গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, ইত্যাদি ভাঙচুর করেন, তাহলে তিনি অন্যূন ১ (এক) বছর এবং অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) বছর কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন৷

অর্থাৎ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা কর্মচারীদের মারধর ও গাড়ি সাজসরঞ্জাম ভাঙচুর করলে ১ বছর থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

অনেক সময় অগ্নি নির্বাপণের সময় পানি দিতে চায় না অনেক প্রতিষ্ঠান বা পরিবার। অথচ আইনে অগ্নি নির্বাপণের সময় প্রয়োজনে যে কোনো এলাকার ডোবা-পুকুর-নালা-লেক পানি ব্যবহারে কেউ বাধা দিতে পারবে না। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে- অগ্নি নির্বাপণের জন্য প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো ডোবা, পুকুর, নালা বা লেক হতে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মালিক, দখলদার বা অন্য কোন ব্যক্তি কোন প্রকার বাধা প্রদান করতে পারবে না৷

অনেক সময় দেখা যায়, অগ্নি নির্বাপণের সময় কোনো স্থাপনা ভাঙতে গেলে বাধা দেয়া হয়। এছাড়া কাউকে সরে যেতে বললে ক্ষেপে যায়, গালাগালি করেন। এছাড়া অগ্নি নির্বাপণের সময় প্রচুর লোকজন সমাগম হয়। যা কোনভাবেই বাংলাদেশের আইনে করতে পারবেন না। এমনকি ফায়ার সার্ভিস এর কর্মকর্তা চাইলে যে কাউকে প্রয়োজনবোধে সরিয়ে দিতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজনবোধ করলে একজন ফায়ার অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তার বে-আইনি সমাবেশের ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা থাকে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

কিন্তু অনেকেই ফায়ার অফিসারের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন না। তাই ফায়ার সার্ভিস এর কার্যক্রমের সময় নীরহ বাহিনী মনে করে অনেক অপরাধ করে ফেলেন।

অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে- কোন ভবন বা স্থানে আগুন লাগলে বা লেগেছে বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকলে মহাপরিচালক বা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্রিগেডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-
(ক) ব্রিগেডের অপারেশন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন ব্যক্তিকে তার অবস্থান হতে সরিয়ে দিতে পারবেন;
(খ) অগ্নি নির্বাপণ নিশ্চিত করার স্বার্থে কোন স্থাপনা, যত সম্ভব কম ক্ষতিসাধনক্রমে, স্থানচ্যুত করতে পারবেন;
(গ) অগ্নি প্রজ্বলন স্থানে পানির প্রবাহ বাড়ানোর উদ্দেশে পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি সরবরাহের পাইপ বন্ধ করতে বা করার আদেশ দিতে পারবেন;
(ঘ) ব্রিগেডের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে মানুষের এমন সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশে একজন পুলিশ কর্মকর্তার বে-আইনি সমাবেশের ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা থাকে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন;
(ঙ) অগ্নি নির্বাপণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন৷

তাই ফায়ার সার্ভিস গাড়ি, সাজ সরঞ্জাম ভাঙচুর ও অগ্নি নির্বাপণের সময় কোন বাধা দেয়া শাস্তি যোগ্য অপরাধ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মচারীদের মারধর করলে কি আর হবে এমন ভাবার উপায় নেই। তাই আইন সম্পর্কে জানুন। ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করুন। আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি আপনার জীবন ও সম্পদ রক্ষায়।

তালহা বিন জসিম
স্টেশন অফিসার
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক