আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্রিয় অথবা নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠক হয়ে থাকেন। তাহলে প্রাণঘাতি 'ব্লু হোয়েল' গেম সম্পর্কে ইতোমধ্যেই জেনে গেছেন। কারণ নামটি এখন আর নতুন নয়। এই খেলার জন্ম রাশিয়ায়।
সবচেয়ে বেশি রাশিয়ায়। কিছুদিন ধরে ভারতে প্রতি মাসেই এই গেমের কারণে আত্মহত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশেও পাওয়া গেল একই খবর। গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা তাদের সেন্ট্রাল রোডের বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ বলছে সে আত্মহত্যা করেছে, তবে ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি৷ পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বর্ণার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে৷ পুলিশ একটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে৷ তাতে বড় করে লেখা, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়৷' লেখা শেষে একটি হাসির চিহ্ন (স্মাইলি) আঁকা৷
এই ঘটনার পর বাংলাদেশের বিশেষ করে রাজধানীর অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনোবিদ ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। জানার চেষ্টা করছেন তার সন্তান এমন কোন মারণনেশায় ঢুকে পড়লো কিনা।
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, এই গেমে ঢোকা মানেই মৃত্যুর পথে পা বাড়ানো। এটি একটি অনলাইনে নির্দেশনামূলক গেম৷ প্রতিটি স্তর পার হতে হয় নির্দেশনা মত৷ আর সেই কাজের ছবি আপ করতে বলা হয়৷ কখনো ছুরি দিয়ে কেটে হাতে তিমির ছবি আঁকা, কখনো ঠোঁট সেলাই করা, কখনো গভীর রাতে ছাদের কার্ণিশে হাঁটতে বলা হয়৷ আর তার ছবি আপ করতে বলা হয়৷ ছবি আপ করলেই তাকে পরবর্তী স্তরে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়। একবার কেউ ঢুকে পড়লে আর সে সহজে গেম থেকে বের হতে পারে না। মৃত্যুর মাধ্যমে গেমের সমাপ্তি ঘটে।
মনোবিদরা বলছেন, ‘‘এই গেমের নেপথ্যে যারা কাজ করে তারা হতাশা এবং হিরোইজমকে ব্যবহার করে৷ আর ধীরে ধীরে আত্মহননের পথে নিয়ে যায়৷ এটা মোটেই অসম্ভব নয়৷ মানুষের মানসিক অবস্থাকে ব্যবহার করতে পারলে তাকে দিয়ে অনেক কিছুই করানো সম্ভব৷ গেমের এই বিষয়টা সামনে আসতেই অনেক তরুণ-তরুণী এই গেম খেলার আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিঙ্ক চাইছে৷ তারা মনে করছে এই গেম তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না৷ মূলত তারাও হিরোইজম দেখাতে চাইছে৷ আর এভাবেই তারা ফাঁদে পড়ছে৷''
তাদের মতে এই মরণফাঁদ থেকে নিজে বাঁচতে ও অন্যকে বাঁচাতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। নিজের সন্তানের দিকে নজর রাখতে হবে। তাকে সময় দিতে হবে। সে যাতে কোন অবসাদে না ভোগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে কিছু বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চলুন জেনে নিই সে সম্পর্কে-
১। প্রথমত চাই আপনার সচেতনতা। নিজেকেই প্রশ্ন করুন- কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় যাকে আপনি কখনও দেখেননি, যার পরিচয় জানেন না, তার কথায় নিজের জীবন অকালে বিলিয়ে দিবেন!
২। আপনার সন্তানকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে তার খোঁজ খবর নেওয়া। সন্তানকে বাসা বা অন্যত্র কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেওয়া এবং এই সব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা।
৩। আপনার সন্তান ও পরিবারের কোনও সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেওয়া। তার পাশে দাঁড়ানো। তাকে তিরস্কার না করে সমস্যা সম্পর্কে জানুন, সহযোগিতা করুন।
৪। ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কিত কোনও লিংক আসলে তা এড়িয়ে চলা। সমাজের তরুণ ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মাঝে এই গেমের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা।
৫। সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা, যাতে করে তারা বুঝতে পারে আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় ধরণের অপরাধ।
৬। কখনই কৌতুহলী মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতুহল থেকে এটি নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
৭। জীবনে যদি একঘেয়েমি এসে থাকে তবে কিছুদিন বেড়িয়ে আসা যেতে পারে। তাই বলে ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলা নয়!
৮। যে এই গেমটির প্রস্তাব দেবে উল্টো তাকে ‘ব্লু হোয়েল’ না খেলার পরামর্শ দিন।
৯। যদি অনলাইনে অচেনা কেউ আপনাকে এই গেমটি খেলতে প্ররোচিত করে, তবে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করুন।