‘তারা আমার লগে খারাপ কাজ করতে চাইত। খারাপ কাজ না করলে ইঞ্জেকশন দিত। হাত মিলাইবার কথা কইয়া সুঁই ঢুকে দিত। যখন সুঁইগুলা দিত, তখন মাথা ঘুইরা পইরা যাইতাম, অজ্ঞান হইতাম; কিচ্ছু কইতে পারতাম না’- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সৌদি ফেরত নির্যাতনের শিকার নারী রেখা (ছদ্মনাম)।
গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন রেখা। সেখানে একটি বাসায় ছিলেন ৭ মাস। কিন্তু এই কয় মাসে বাসার মালিক, মালিকের স্ত্রী ও সন্তানরা তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ তার।
নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না রেখা।
পরশু (২১ জুলাই) রাতে এয়ার এরাবিয়ার একটি বিমানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া ৪৩ জন নারী দেশে ফিরেছেন। তারা সকলে সৌদির ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে ছিলেন। তাদের মধ্যে রেখাও ছিলেন একজন।
সৌদি ফেরত অন্য নারীদের অবস্থা স্বাভাবিক মনে হলেও রেখা ছিলেন পুরোপুরি অস্বাভাবিক। শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট থেকে নামার পর তাকে এক নারীর মাধ্যমে বের করে আনা হয়। এরপর তাকে কিছুক্ষণের জন্য একটি মালবাহী স্ট্রেচারে বসিয়ে রাখা হয়। পরে তার হাতে ব্র্যাকের অভিবাসন শাখা থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবকরা খাবারের প্যাকেট তুলে দেন। সেই খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে জোছনার কথা হয় সাংবাদিকদের।
সৌদি ফেরত ওই নারী মাঝেমধ্যে তার বাবার নাম, গ্রাম, জেলার নাম বলতে পারলেও পরক্ষণই আবার সব ভুলে যাচ্ছিলেন। বারবার সৌদির সেই বাসার মালিকের নির্যাতনের গল্পগুলো বলছিলেন আর বাংলা-আরবি মিশিয়ে কী কী সব বলছিলেন! বারবার তার শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করার কথাও বলছিলেন। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বাসার মালিক কেন ইঞ্জেকশন পুশ করতেন, তা তিনি নিজেও জানতেন না।
রেখার ভাষ্য, খারাপ কাজ করতে চাইলে বাঁচার জন্য তিনি সবার সামনে বসে নামাজ পড়তেন। তার শরীরে ৩০টা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। তার মালিক বলতেন, ইদরা (আরবিতে ইঞ্জেকশন) ভালো, এটা বলেই পুশ করতো।
‘সুঁই ফুটানোর লগে লগে আমার মাথা ঘুরান দিয়া পইরা যাইতাম। মাটিত পইড়া অজ্ঞান হইয়া যাইতাম। ওরা আমারে মাইরা পাগল বানাইছে। আল্লাহ ওগো বিচার কইরবে। ’
রেখা আরও জানান, তার কোনো এক সময় বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে সংসার করা হয়নি। সৌদি যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাবার বাড়িতেই থাকতেন। বাড়তি আয়ের আশায় দালালের মাধ্যমে সৌদি পাড়ি জমান তিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে রেখা যে দেশে ফিরছেন, খবরটি সে আসার দিন পর্যন্ত জানতে না তার পরিবারের সদস্যরা।
পরে তার পরিবারকে ব্র্যাকের অভিবাসন শাখার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে জানানো হয়েছে। অবশ্য এখনো ব্র্যাকের অভিবাসন শাখায় তাকে রাখা হয়েছে।
আগামীকাল (২৪ জুলাই) রেখাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিবাসন শাখার সংশ্লিষ্টরা।
অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর