বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অচল  

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অচল।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অচল  

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

দেশের উত্তরের সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধার আমদানী কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। পাথর লোড আনলোড, নিয়োগ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, সিন্ডিকেটের দৌরাত্মসহ বেশ কিছু কারণে পাথর নির্ভর এই স্থলবন্দরে আমদানীকারকরা পাথর আমদানী বন্ধ করে দিয়েছে। বন্দরটির তত্বাবধায়ক কোম্পানী বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দূরত্ব, পন্য লোড আনলোডের ফি নির্ধারণ এবং হঠাৎ করে শ্রমিক বন্দোবস্তের জন্য নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নেওয়ার পর এই স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং সিএন্ডএফের নেতারা রোববার সকালে বন্দরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যেগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনও করেছেন।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিনকোটি টাকা থাকলেও এসব কারণে তা কমে গিয়ে আদায় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের অভিযোগ কোনো রকম নিয়ম কানুন না মেনে পণ্য বন্দোবস্তের জন্য পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুলের মালিকাধীন ‘এটিআই’ নামক একটি অখ্যাত কোম্পানির সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেড কতৃপক্ষ। চুক্তির পরেই এটিআই লিমিটেডের কার্ডধারী শ্রমিক ব্যাতিত অন্য কোনো শ্রমিক সেখানে পণ্য হ্যান্ডলিং করতে পারছে না। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হয় অসন্তোষ।

অভিযোগ উঠেছে গত একমাসে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে প্রায় চারশ শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে এটিআই। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় কোম্পানীটি ইতোমধ্যে শ্রমিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শ্রমিকদের একটি অংশের অভিযোগ এটিআই এবং স্থানীয় সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শ্রমিক নিয়োগে প্রত্যেকের কাছ থেকে দেড় থেকে দুলাখ টাকা নিয়েছে।

শ্রমিক নেতা ইউসুফ আলী জানান, শ্রমিক নিয়োগের নামে বাণিজ্য করেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। আমরা চাই নিরপেক্ষভাবে শ্রমিক নিয়োগ করা হোক।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ১৪ মে থেকে হঠাৎ করেই বন্দর কতৃপক্ষ পণ্য আমদানীতে প্রতি টনে লোড বাবদ ৫২ টাকা এবং আনলোড বাবদ ৫২ টাকা নির্ধারণ করে। তাই ব্যবসায়ীদের হঠাৎ করে পোর্টচার্জ এবং ভ্যাটসহ ১২০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। কিন্তু পন্য লোড আনলোডের  নামে এই টাকা নেওয়া হলেও কতৃপক্ষ  শুধু পন্য আনলোড করে দেয়। তারা লোডিং করে দিচ্ছে না । ফলে আমদানীকারকদের পন্য লোডিং এর পেছনে আলাদা আরও  টাকা দিতে হচ্ছে। এতে  বিপূল পরিমাণ লোকশান গুণতে হচ্ছে পাথর আমদানীকারকদের। গত শনিবার ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং সিএন্ডএফের নেতারা বৈঠক করে ইতোমধ্যে নেওয়া লোডিং চার্জ এর টাকা ফেরত এবং পরে পন্য লোডিং এর বন্দোবস্ত না করলে আমদানী কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।  

পাথর আমদানী কারক তফিজুল ইসলাম জানান, বন্দরে কয়েক বছর ধরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডকে পাথর আনলোড বাবদ ৩১ টাকা দিয়ে আসছি। এতদিন তারা লোডিং চার্জ নেয়নি। এখন তারা আনলোডিং চার্জ এবং লোডিং চার্জ দুটোই নিচ্ছে। তাতেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তারা চার্জ নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু মালামাল লোডিং করে দিচ্ছে না। ফলে বন্দরকে ৫২ টাকা লোডিং চার্জ দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। আলাদা করে শ্রমিকদের লোডিংয়ের টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে  ভূটান থেকে আমদানী করা বুড়িমাড়ি বন্দরে একই পাথরের মূল্য যেখানে ১০০ টাকা সিএফটি। একই পাথর বাংলাবান্ধায় বিক্রী করতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা সিএফটি। ফলে আমাদের পাথর কেউ কিনবে না।

আমদানিকারক মোখলেছুর রহমান বলেন, বলেন উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের দুইজন জনপ্রতিনিধি, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, জেলা আমদানী ও রপ্তানীকারক এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সিএন্ড এফ এসোসিয়েশনের সভাপতিসহ একটি প্রভাবশালী মহল এটিআইয়ের শেয়ার কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্থলবন্দরটিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

এদিকে এটিআইএর প্রোপাইটার রুহুল আমিন বাবুল বলেন, এখনো কোনো শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দুটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে মাত্র। লোড এবং আনলোডিং দুটোই করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাথর ব্যবসায়ীরা আমদানী করা পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে ভেঙ্গে বিক্রী করছেন বলে লোডিং এর ক্ষেত্রে একটু জটিলতা আছে। সব সমাধান হয়ে যাবে। এটিআইএর শেয়ার বিক্রী হয়নি। তবে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর সহযোগিতা নিচ্ছি । কোনো শ্রমিকের কাছে টাকা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কতৃপক্ষের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, এই বন্দরে আগে সরকারি নিয়ম কানুন প্রয়োগ করা হয়নি। বন্দরটিকে চালু করার জন্য এতদিন শিথিল নিতীমালা গ্রহণ করা হয়েছিল। এতদিন ব্যবসায়ীরা সরকারি রাজস্ব প্রদান করেনি। ফলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্মসহ শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল বন্দরটি। সরকারি রাজস্বের কথা চিন্তা করে লোড আনলোড ১০৪ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব বন্দরেই একই নিয়ম চালুু আছে। বর্তমানে এই নিতীমালা নতুন করে প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে আমদানীকারক আর শ্রমিকদের মধ্যে ভূল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে । কিছু দিন গেলে এসব ঠিক হয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।  


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/হায়দার/তৌহিদ)
 

সম্পর্কিত খবর